সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশে উপযোগী কি না ব্যাখ্যা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশে উপযোগী কি না ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বাংলাদেশে কতটুকু গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে জনগণের অধিকার আদায়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সরকার হলো
সংসদীয় সরকার। এ সরকার ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি শাসন কার্যের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। এ সংসদীয় সরকার।
ব্যবস্থাকে উপযোগী করে তুলার জন্য কতকগুলো শর্ত রয়েছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ন্যায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একথা সমভাবে প্রযোজ্য।

সংসদীয় সরকার বাংলাদেশে উপযোগী কি না : সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের জন্য বাংলাদেশে মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছিল। দীর্ঘ ষোলো বছর পর দ্বিতীয়বারের জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তিত হওয় প্রাকালে আপামর জনগণের মনে এ প্রত্যাশাই জন্মেছিল এতদিনে বাংলাদেশে সকল অস্থিরতা অস্থিতিশীলতার অবসান ঘ গণতন্ত্রায়নের পথ নিষ্কণ্টক হলো। কিন্তু এ সংসদীয় গণতন্ত্র বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হতে গিয়ে নানা দিক থেকে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে। নিম্নে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতার ভিত্তিতে এর উপযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো :

যে কোন রাষ্ট্রের সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশে চারটি বিষয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো নিম্নরূপ :

১. নিয়মিত অবধি, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংসদীয় ব্যবস্থার জন্য অবাধ নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পদ্ধতি
অপরিহার্য। বাংলাদেশে ১৯৯১ সাল পরবর্তী তিন তিনটি জাতীয় নির্বাচন মোটামুটি অবাধ এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলেও এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী দল। তবে নির্বাচিত সরকার পূর্ণ মেয়াদেই তাদের শাসনকাল পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছে।

২. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : মাত্র সংসদীয় ব্যবস্থায়ই নয় যে কোন সরকার ব্যবস্থার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে নিম্ন আদালতগুলো যদিও দুর্নীতিতে ভরপুর তথাপি উচ্চ আদালতের প্রতি মানুষের এখনো ভরসা রয়েছে। আর বিচার বিভাগকে যদি শাসন বিভাগ থেকে পুরোপুরি পৃথক করা যায়, তাহলে সংসদীয় সরকার আরো ব্যাপকভাবে সফল হবে এ আশা করা যায়।

৩. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংসদীয় গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ
গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জনগণ সরকারের কার্যাবলি সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের
জীবনের নিরাপত্তা অনেকটাই হুমকির মুখে, যা স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের নিরুৎসাহিত করছে।

৪. নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা: নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতার জন্য সংসদকেই বেশি কার্যকর করার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার যদি সবসময় সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে তাহলে সংসদীয় সরকার সফল হয়।

মূল্যায়ন : অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এটি এখনও প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারে নি। যদিও এ ব্যবস্থা নানাদিক থেকে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে তথাপি এ সরক বাংলাদেশের জন্য উপযোগী নয় একথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের ঐতিহ্য এখনো সৃষ্টি হয় নি। সংসদীয় গণতন্ত্র যদি উপযোগী না হয় তবে প্রশ্ন থাকে কোন পদ্ধতি উপযোগী। রাষ্ট্রপতি শাসি শাসনব্যবস্থার স্থানও বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছে। তাই জনগণ তথা সকল রাজনৈতিক দলগুলো সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে এসেছে। তাই সংসদীয় সরকারই বাংলাদেশের জন্য উপযোগী হবে। তবে এ ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতির আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উভয়ের কিছু ভালো এবং কিছু খারাপ দিক রয়েছে। আইনসতা ও শাসন বিভাগের উপর সহযোগিতার কথা দেখলে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বেশি উপযোগী। আবার শাসনব্যবস্থার দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দিক দেখলে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার উপযোগী। একটি দেশের জন্য কোন সরকার ব্যবস্থা কাম্য তা নির্ভর করে সে দেশের ভৌগোলিক এলাকা এবং জনসমষ্টির উপর। তারপরও সাম্প্রতিক কালে পার্লামেন্টারি শাসনব্যবস্থা অধিক কাম্য ।