লিখিত সংবিধান বলতে কী বুঝ? লিখিত সংবিধানের দোষগুণআলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, লিখিত সংবিধান কী? লিখিত সংবিধানের সুবিধা অসুবিধা আলোচনা কর।
অথবা, লিখিত সংবিধান কী। লিখিত সংবিধানের ত্রুটিগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, লিখিত সংবিধানের সংজ্ঞা দাও। এর ভাল-মন্দ দিকগুলো পর্যালোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : সংবিধানের যেসব শ্রেণিবিভাগ রয়েছে লিখিত সংবিধান তার মধ্যে অন্যতম। লিখিত সংবিধানে রাই পরিচালনার অত্যাবশ্যক মূলনীতিগুলো সুস্পষ্টভাবে লিখিত থাকে। এ সংবিধান সাধারণত একটি গণপরিষদে কনভেনশন কর্তৃক প্রণীত ও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। এ সংবিধানসমূহ রীতিনীতি, প্রথা প্রকৃতির মাধ্যে না। লিখিত সংবিধানের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ও প্রাচীন উদাহরণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান।

লিখিত সংবিধান : সাধারণত একটি রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার মৌলিক নিয়মকানুনগুলো যখন এক বা একাধিক দলিলে লিপিবন্ধ থাকে তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে লিখিত সংবিধানের সংজ্ঞা নিয়েছেন। নিম্নে কতিপয় সংজ্ঞা দেয়া

অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettell) বলেছেন, “যখন কোন দলিলে সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থার সকল মৌলিক
নীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে, তখন তাকে লিখিত সংবিধান বলে।

অধ্যাপক গার্নার বলেছেন, “লিখিত সংবিধানে শাসনতন্ত্র সংক্রান্ত বিষয়সমূহ দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে। শাসনকার্য পরিচালিত হবে এবং বিভিন্ন বিভাগসমূহ কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে তা পূর্বেই নির্ধারিত হয়।”

K. C. Wheare বলেছে, “লিখিত সংবিধান যেসব লিখিত নিয়মের সমষ্টি যা কি উদ্দেশ্যে ও সরকারের বিভাগসমূহের মধ্যে কিভাবে ক্ষমতা পরিচালিত হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে।” অতএব, বলা যায় যে, লিখিত সংবিধান হলো এমন একটি মৌলিক দলিল যা সম্পূর্ণরূপে লিখিত। লিখিত সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক প্রণীত হয়ে থাকে। লিখিত সংবিধানের দোষগুণ নিম্নে পর্যায়ক্রমে লিখিত সংবিধানের দোষগুণ আলোচনা করা হলো :

লিখিত সংবিধানের দোষ বা অসুবিধা : নিম্নে লিখিত সংবিধানের দোষসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. রক্ষণশীল : লিখিত সংবিধানের প্রধান দোষ হলো রক্ষণশীল চরিত্র। লিখিত সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়ায় একে সহজে পরিবর্তন করা যায় না। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রক্ষা করে দেশের অগ্রগতি সামজ্ঞস্যপূর্ণ সংশোধন সম্ভব হয় না। তাই লিখিত সংবিধান জনগণের আস্থা হারায়।

২. তা সংবিধান লিখিত হলেও সবকিছু লিপিবন্ধ করা সম্ভব হয় না। কিছু কিছু অলিখিত বিধান থেকে যায়। তাই বিশ্লেষণে সময়ে সময়ে বিভ্রান্তি ও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। সরকার হলো পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা, যার স্থির সংবিধান সকল পরিবেশে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে না।

৩. সংকীর্ণ : লিখিত সংবিধানে বিধিবদ্ধ বিধানগুলোকেই গুরুত্ব দেয়া হয়। প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতি প্রকৃতিকে এ সংবিধানে উপেক্ষা করা হয়। অথচ যে কোন দেশের শাসনব্যবস্থায় এগুলোর রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। তাই লিখিত সংবিধানের ধারাকে সংকীর্ণ বলা হয়।

৪. সিদ্ধান্তে বিলম্ব : লিখিত সংবিধান থাকলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অসুবিধা হয়। লিখিত অনুসারে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় তা জটিল ও সময় সাপেক্ষ। সমস্যার দ্রুত সমাধানে তা সহায়ক নয় ।

৫. অন্যান্য অসুবিধা : লিখিত সংবিধানের আরো কতকগুলো অসুবিধা রয়েছে। যথা অসন্তোষ সৃষ্টি, অধিকারের একমাত্র রক্ষাকবচ নয়, অগ্রগতির অন্তরায়, ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি প্রভৃতি।

লিখিত সংবিধানের গুণ : নিম্নে লিখিত সংবিধানের গুণাবলি আলোচনা করা হলো :

১. সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট : লিখিত সংবিধান সাধারণত সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট। বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা বিচার বিবেচনা ও চিন্তাভাবনার পর লিখিত আকারে এ সংবিধানের সৃষ্টি হয়। সংবিধানের বিধানসমূহ লিখিত হলে তা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট এবং সহজেই বোধগম্য হয়।

২. স্থায়িত্ব: স্থায়িত্ব লিখিত সংবিধানের অন্যতম একটি গুণাবিল। লিখিত সংবিধানকে সরকার সহজে পরিবর্তন করতে পারে না। কেননা লিখিত সংবিধান সংশোধনের জন্য এক বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। তাই সরকারের খেয়ালখুশি এবং জনগণের তাৎক্ষণিক উন্মাদনায় চাপের মুখেও লিখিত সংবিধান অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

৩. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ লিখিত সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সুস্পষ্ট ভাষায় লিপিবন্ধ করা থাকে। এর ফলে নাগরিকলের প্রতি সরকারের কর্তব্য এবং নাগরিকগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত থাকে। তাছাড়া লিখিত সংবিধান নির্দিষ্ট ও স্থায়ী হওয়ার জন্য সরকার স্বৈরাচারী হয়ে জনগণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

৪. জনমতের প্রতিফলন : লিখিত সংবিধানে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। কারণ এ সংবিধান সাধারণত কোন গণপরিষদ, সম্মেলন বা কমিশন কর্তৃক রচিত হয়। আর এ গণপরিষদ বা সম্মেলন গঠিত হয় জনগণের প্রতিনিধিদের দিয়ে। এভাবে জনপ্রতিনিধিদের আলাদা আলোচনার মাধ্যমে যে সংবিধান প্রণীত হয় তাতে জনমতের প্রতিফলন ঘটে।

৫. গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে লিখিত সংবিধান যেহেতু সহজে পরিবর্তনীয় নয়, সেহেতু ক্ষমতাসীন দল ইচ্ছা করলেই স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে পারে না জনগণের অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ফলে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে।

৬. অন্যান্য গুণাবলি : লিখিত সংবিধানের আরো কতকগুলো গুণাবলি রয়েছে। যথা : বিচারকার্যের সুবিধা, সংক্ষিপ্ততা, দুষ্পরিবর্তনীয়, যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতির উপযোগী, সাংবিধানিক আইনের প্রাধান্য প্রভৃতি।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রত্যেক ধরনের সংবিধানের অবশ্যই কিছু কিছু থেকে এ গুণ বর্তমান রয়েছে। তাই ভুলনামূলক বিশ্লেষণে একটি দেশের সংবিধান লিখিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। লিখিত সংবিধানের
সমস্যা কম বিধায় পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে লিখিত সংবিধানের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।