সংবিধান কীভাবে বিকশিত হয়? আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

উত্তরঃ ভূমিকা : প্রত্যেক রাষ্ট্রের নিজস্ব সংবিধান থাকে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। সরকারের রূপ সংবিধানের দ্বারাই নির্ধারিত হয়। সরকার ও জনগণের মধ্যে কি সম্পর্ক থাকবে তাও সংবিধান কর্তৃক নির্ধারিত হয়। সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সেসব বিধিবন্ধ নিয়ম ও নীতিমালা, যা দ্বারা রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। একটি রাষ্ট্রে সংবিধান সরকারের সৃষ্টি নয়, বরং সরকারই সংবিধানের সৃষ্টি। Aristotle বলেছেন, “Constitution is the way of life, the state has chosen for itself.”

“সংবিধান তৈরি করা যায় না, বিকশিত হয়” (Constitution is not made, it grows ) : সংবিধান প্রধানত চারটি পৃথক পৃথক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ চারটি পদ্ধতি হচ্ছে- অনুমোদন, ইচ্ছাকৃত রচনা, ধারাবাহিক বিবর্তন এবং বিপ্লব। প্রত্যেক রাষ্ট্রই এ পদ্ধতিগুলোর যে কোন একটির মাধ্যমে কিংবা একাধিক কারণে সংবিধান অর্জিত হয়ে থাকে। তবে সংবিধান প্রতিষ্ঠা করার বিবর্তনমূলক পদ্ধতি অন্যান্য পদ্ধতিসমূহের মধ্যে একটি। প্রত্যেক সরকারের উৎসই হলো সংবিধান, তা গণতান্ত্রিক হোক বা অগণতান্ত্রিক হোক। বস্তুত যে কোন ধরনের সরকারের নিৰ্দেশকই হচ্ছে সংবিধান, যা সরকারের মৌলিক বিষয়াদির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিধিবিধানকে অন্তর্ভুক্ত করে। অধ্যাপক হারমান ফাইনার (Prof. Herman Finer) সংবিধানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন যে, “মৌল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সুষম ব্যবস্থাই সংবিধান ।” এ সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠে। যথা:

১.সুষম ব্যবস্থা এবং

২. মৌলিক বিধানসমূহ।

একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সম্যক উপলব্ধির জন্য এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রসঙ্গে অধ্যয়ন করতে হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান যেমন- আইনসভা নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক দল প্রভৃতি পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা রক্ষা করে চলে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, আইনসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে নির্বাহী বিভাগ বা বি বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পায়। এটাতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলো একত্রিতভাবে কাজ করে। একটি অপরটি হতে বিচ্ছিন্ন নয় । সংবিধানের এক অংশের সঙ্গে অপর অংশের কার্যকারণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা থাকা একান্ত আবশ্যক। মৌলিক বিধানসমূহ বলতে দেশের মৌলিক আইন বা সংবিধানের মাধ্যমে নিশ্চিতকৃত মৌলিক নিশ্চয়তাসমূহকেই বুঝায় যেগুলো ছাড়া জনকল্যাণ সাধন সম্ভব নয়। প্রত্যেক রাষ্ট্রের সংবিধানেই মৌলিক বিধানসমূহ সন্নিবেশিত ও সুরক্ষিত থাকে । কিন্তু এ বিধানসমূহ অপরিবর্তনশীল, চিরস্থায়ী এবং অক্ষয় নয়। এগুলো বরং অস্থায়ী, নিয়ত পরিবর্তনশীল। কাজেই বলা হয় যে, “সংবিধানের মৌলিক আইনসমূহ এক পরিবর্তনশীল তালিকাস্বরূপ।” (The fundamentals of the constitution are a changing catalogue).

সমাজের বিকাশ ও সংবিধানের মৌল বিধান : সংবিধানের মৌল বিধানসমূহ মানবসমাজের ক্রমবিকাশেরই ফল। কোন মৌলিক বিধানই সময়ের বিরুদ্ধে চিরকাল ছাট হতে পারে না। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস ও ধ্যানধারণার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন সাধিত হয়। এ পরিবর্তন সংবিধানের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনয়ন করে। আবার মানসমাজ সংবিধান লিখিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। কোন বিধানের গুরুত্ব অনুসারে সমাজ একে গ্রহণ করে ফেলে। সংবিধানে এটা সন্নিবেশিত না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ আইন ও প্রথাগত বিষাদের মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বর্তমানে জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন। সেখানে দলীয় ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক সরকারের একটি মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গ্রহণ করা হয়।অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতাগণ প্রেসিডেন্টকে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত করতে চেয়েছিলেন। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দলীয় ব্যবস্থার কোন স্বীকৃতি প্রদান করে নি, অথচ দলীয় ব্যবস্থা সেখানে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। অনুরূপভাবে, যুক্তরাজ্যের সংবিধানের প্রায় সবকিছুই অলিখিত। এটাকে একটি ক্রমবর্ধমান জীবন্ত শক্তিরূপে গণ্য করা যায়। এটা বিবর্তনশীল, বৈপ্লবিক নয়। জাতীয় স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে এবং হচ্ছে। এ সংবিধান যদিও কিছুসংখ্যক লিখিত আইন দ্বারা বিধিবদ্ধ তথাপি এটা লিখিত আইন অপেক্ষা অলিখিত প্রথাগত বিধান, বিচার বিভাগীয় অনুশাসন ও সাধারণ আইন প্রভৃতির দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত। এটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎস দ্বারা পরিপুষ্ট ও পরিবর্ধিত হয়েছে।

উপসংহার : আধুনিক কালে বিভিন্ন রাষ্ট্র বহুলাংশে অসংখ্য, সংবিধিত, প্রথাগত বিধান ও শাসক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ দ্বারা শাসিত হয়। এদের মাধ্যমেই নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে সংরক্ষিত করার ব্যবস্থা করা হয়। সুতরাং একথা বলা অযৌক্তিক হবে না যে, “সংবিধান তৈরি করা যায় না, বিকশিত হয়।” (Constitution is not made, it
grows)