অথবা , দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের অসুবিধা আলোচনা কর।
অথবা, দুষ্পপরিবর্তনীয় সংবিধানের নেতিবাচক দিকগুলো আলোচনা কর।
অথবা, দুষ্পপরিবর্তনীয় সংবিধানের দোষসমূহ উল্লেখ কর ।
উত্তরঃ ভূমিকা : জনগণের জন্য রাষ্ট্র রাষ্ট্রের জন্য জনগণ নয়। তাই রাষ্ট্রের কার্যাবলি হবে জনগণের দাবি পুরণের নির্মিতে। আর একটি দেশের জনগণের দাবি পূরণ হয় সংবিধানের মাধ্যমে। মানগণের দাবি পূরণ করতে হলে সংবিধান অবশ্যই পরিবর্তনশীল হতে হবে। অপরিবর্তনশীল সংবিধান গণদাবি পূরণে অক্ষম। অর্থাৎ পুষ্পরিবর্তনীয় পরিধানের নানাবিধ দোষত্রুটি বিদ্যমান। কেননা দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান পরিবর্তনে জটিল নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
পরিবর্তনীয় সংবিধানের দোষাবলি বা নেতিবাচক দিকসমূহ (Demerits of rigid constitution) : অন্যান্য ধানের ন্যায় দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানেরও কতকগুলো দোষ রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. রক্ষণশীল দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান রক্ষণশীল। এ সংবিধান সমাজে সময়োপযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে। মা মানবসমাঝের প্রয়োজনেই সংবিধানের সৃষ্টি। তাই সমাজের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে সংবিধানকে চলতে হয়। কিন্তু এ ধরনের সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি অত্যন্ত মিছিল। তাই সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন সত্বেও শাসনতন্ত্র অপরিবর্তিত থেকে যায়। রক্ষণশীলতা দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের একটি বড় নেতিবাচক দিক |
মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণের ক্ষেত্রে এ সংবিধান সাহায্যের পরিবর্তে প্রতিকূলতার সৃষ্টি করে।
২.অরুরি অবস্থার উপযোগী নয় : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান জরুরি অবস্থার উপযোগী নয়। সংকটকালীন পরিস্থিতি এ সংক্ষিপ্ত: দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান লিখিত বিধায় এটি সাধারণত সংক্ষিপ্ত হতে বাধ্য। যেহেতু যে কোন লিখিত বিধান একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রণীত হয় সেহেতু উক্ত সময়ের মধ্যে জনীয় সব ব্যবস্থা লিপিবন্ধ নাও হতে পারে এবং অনেক খুঁটিনাটি বিষয় এড়িয়ে যায়। ফলে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান অসম্পূর্ণ ও অপরিণত হয়।এটিকে সময়ের উপযোগী করে নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ ধরনের সংবিধানের ফলে বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে।
৩. বরণের সহায় এর সংবিধান: পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। অর্থাৎ মা (Macaulay) বলেছেন, The great cause of revolution is this, that while nations move onward constitutions মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সহজে পরিবর্তনীয় বিধান মূলত বিচার বিভাগের হে পড়িয়েছে। এতে আইনসভার প্রাধান্য বহুল পরিমাণ পর্ব । (Laski) বলেছেন, বিচার
৪ বিচার বিভাগের প্রধান: সংবিধান দৃষ্পরিবর্তনীয় হলে সময়োপযোগী করার জন্য বিচার বিভাগ এর ব্যাখ্যা দিে stand still. পান করার অধিকার দেয়ার অর্থ তাকে রাষ্ট্রের চূড়ান্ত শক্তিতে পরিণত করা।”
৫.অগ্রগতিতে সহায়ক নয় : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের প্রধান দোষ হলো এটা সহজে পরিবর্তনীয় নয়, তাই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়ক নয়। সার্বিক উন্নয়ন বা কল্যাণের জন্য যে কোন সময় পরিবর্তনের আবশ্যকতা দেখা দিতে পারে, কিন্তু এ সংবিধান সহজে পরিবর্তনীয় নয়। দুষ্পরিবর্তনীয়তার কারণে অনের সময় দেশের উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়।
৬. রাজনৈতিক বিরোধের সহায়ক : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান পদ্ধতি যেহেতু জটিল সেহেতু আইনসভায় যদি এটি সংশোধনের জন্য উপযুক্ত সংখ্যক সংখ্যাগরিষ্ঠ শাসকশ্রেণী না থাকে তাহলে রাজনৈতিক বিরোধ বা মতপার্থকে এই কোনদিনও সংশোধন হতে পারে না। এমতাবস্থায় দেশের প্রয়োজনের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিকট নিজ স্বার্থই বন্ধ হিসেবে দেখা দেয় এবং রাজনৈতিক অনৈক্য কোন সময়ই দূর হয় না।
৭. বহির্বিশ্বে ক্ষেত্র সীমিত রাখে : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান আদর্শগত কারণে একটি দেশকে বহির্বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। কেননা এরূপ সংবিধান সহজে পরিবর্তনশীল করা যায় না বলে সরকারকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পররাষ্ট্রনীতির আদর্শে স্থিরীকৃত থাকতে হয়। ফলে দেশ একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আটকে থাকে। এর ফলে দেশ বহির্বিশ্বের সার্বিক সহযোগিতা থেকে অনেক পিছিয়ে থাকে।
৮. নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বিপন্ন : দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান প্রণীত ও লিখিত হওয়ার সময় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীরমতো আদর্শের প্রতিফলন ঘটায় এবং সরকার সে মোতাবেকই নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। ফলে দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে সরকারের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এতে করে অনেক সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জন্য হতে পারে। যার পরিণতিতে দেশের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে।
৯. সংসদীয় পদ্ধতির বিরোধী : দুষ্পরিবর্তনীয় শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বিশেষভাবে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ এ ধরনের শাসনতন্ত্রকে জাতীয় আইনসভার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়। আদালত শাসনতন্ত্রের ব্যাখ্যাকারক হিসেবে সরকারের অন্যান্য বিভাগের নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এ রকম ব্যবস্থা সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বিরোধী।
উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানে দোষগুণ উভয়ই বিদ্যমান।
তাই এ সংবিধানের যেমন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ঠিক তেমনি বিশেষ মুহূর্তে এর প্রতি জনগণের উদাসীন মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে। তবে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের দোষের চেয়ে গুনের পরিমাণই বেশি। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের প্রতি একটা স্বাভাবিক ঝোঁক দেখা যায়। তাই বর্তমান বিশ্বে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানই বেশি। গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত।