অথবা, কর্ম সন্তুষ্টি প্রয়োজনীয়তাগুলো কী কী?
উত্তর:
ভূমিকা: সাংগঠনিক আচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল চাকরির সন্তুষ্টি।১৯৩৫ সালে, হপক চাকরির সন্তুষ্টির উপর একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। তারপর থেকে এটি শিল্পে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমকে গতিশীল ও সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রে চাকরির সন্তুষ্টির গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
কাজের সন্তুষ্টির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা: কাজের সন্তুষ্টির গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা নীচে আলোচনা করা হয়েছে:
১. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: কাজের সন্তুষ্টি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। যখন কর্মচারীরা সন্তুষ্ট হয় তখন তারা অনুপ্রাণিত এবং সঞ্চালনের জন্য চালিত বোধ করে। তারা প্রতিটি কাজ মনোযোগ সহকারে সম্পাদন করে। প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে তারা সতর্ক। শিল্প খাতে সংঘাতের মাত্রা কমে যায়। এর ফলে শিল্পের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়।
২. আচরণগত বিকাশ: যে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত আচরণে উৎকর্ষতা অপরিহার্য। কাজের সন্তুষ্টি কর্মচারীর স্বতন্ত্র আচরণের গুণমানকে উন্নত করে সেইসাথে গ্রুপের আচরণে পরিবর্তন আনে। প্রত্যেকের আচরণে একটি গঠনমূলক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
৩. মনোবলের উন্নতি: কাজের সন্তুষ্টি উল্লেখযোগ্যভাবে কর্মচারীদের মনোবল বাড়ায়।মনোবল হল কর্মীর মানসিক অবস্থা।কাজের পরিবেশে মনোবল কর্মীর ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত অনুভূতি প্রকাশ করে। চাকরির সন্তুষ্টির ফলে কর্মীদের মনোবলের উন্নতি হয়।
৪. অনুপস্থিতি হ্রাস: কর্মচারীরা যখন তাদের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট হয়, তখন তারা কাজটিকে উপভোগ্য মনে করে এবং তারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে বা এড়াতে চায় না। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ থেকে অনুপস্থিত নয় কারণ কাজটি উপভোগ্য।
৫. ন্যায্য শিল্প পরিবেশ সৃষ্টি: কাজের সন্তুষ্টি অনুকূল শিল্প পরিবেশ তৈরি করে। শ্রমিকরা সন্তুষ্ট হলে তারা ব্যবস্থাপনার যেকোনো পদক্ষেপের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। কর্মচারী এবং ব্যবস্থাপনার মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পায় এবং প্রতিকূল সম্পর্ক শেষ হয়। ফলে শিল্প পরিবেশ উন্নত হয়।
৬. শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস: শিল্প কর্মীদের সন্তুষ্টি শ্রম টার্নওভারের হার হ্রাস করে। সন্তুষ্ট কর্মচারীরা সাধারণত সংগঠন। ছাড়তে চাই না। বরং প্রতিষ্ঠানের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়।
৭. বিষণ্নতা সমস্যা হ্রাস: কাজের সন্তুষ্টি কর্মীদের বিষণ্নতা সমস্যা হ্রাস করে। একজন কর্মী যদি কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট হন এবং মনে করেন যে তিনি সহজে লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন না, তাহলে সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নেয়। উচ্চ স্তরের কাজের সন্তুষ্টি কর্মীদের হতাশা দূর করে এবং তাদের কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে।
৮. কাজের মান বৃদ্ধি: কাজের সন্তুষ্টি কর্মচারীর কাজের মান বৃদ্ধি করে। কর্মচারীরা সন্তুষ্ট হলে তারা আন্তরিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে। ফলে কাজের মান বাড়ে।
৯. উন্নত শিল্প সম্পর্ক স্থাপন: কাজের সন্তুষ্টি উন্নত শিল্প সম্পর্ক স্থাপনে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে। কাজের সন্তুষ্টি সন্তুষ্ট কর্মচারীদের একটি গ্রুপ তৈরি করে যারা ব্যবস্থাপনার সাথে দ্বন্দ্ব এড়ায় এবং একটি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করে। ফলে শিল্প সম্পর্ক উন্নত হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে শিল্পে চাকরির সন্তুষ্টির গুরুত্ব প্রকাশ পায়। কাজের সন্তুষ্টি বিভিন্ন উপায়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কর্মক্ষমতার উপর খুব ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই শিল্প মনোবিজ্ঞানে কাজের সন্তুষ্টির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।