উত্তর :
ভূমিকা : মানুষ বুদ্ধিদীপ্ত প্রাণী। তাকে সমাজে বসবাস করার জন্য পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে চলতে হয়। আর এ খাপখাওয়াতে গিয়ে তাকে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সাহায্য করে বুদ্ধি। মানুষের কৌতূহল আর সমস্যা থেকেই বুদ্ধির বিকাশ। তাছাড়া পৃথিবীতে মানুষের এত আরাম আয়েশের জন্য যে বিপুল আয়োজন তার পিছনে একমাত্র কারণ বুদ্ধি ।
বুদ্ধি : পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন Culture এ বিভিন্নভাবে বুদ্ধিকে বিচার করা হয়ে থাকে। যেমন- আফ্রিকানদের অভিমত, যারা ভালো দক্ষতার সাথে শিকার করতে পারে তারাই বুদ্ধিমান। আবার দ্বীপবাসীদের অভিমত, দক্ষতার সাথে যারা নৌকা চালাতে পারে এবং সমুদ্রের প্রতিকূলতায় টিকে থাকে তারাই বুদ্ধিমান। আমেরিকানদের অভিমত, যারা মৌখিক ভাষা এবং সংখ্যা ব্যবহারে দক্ষ তারাই বুদ্ধিমান ।ক্রাইডার এবং তাঁর সহযোগীরা তাঁদের Psychology নামক গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-২৯০) বুদ্ধির সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন, “বুদ্ধি হল বিদ্যুতের ন্যায় : সহজে পরিমাপ করা যায়, কিন্তু একে সংজ্ঞায়িত করা প্রায় অসম্ভব।”F. B. MeMahon এবং J. W. MeMahon (১৯৮৬) এর মতে, “বুদ্ধিকে আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে অর্জিত বৈশিষ্ট্যাবলি এবং শিক্ষাগত অভিজ্ঞতার যৌথ প্রভাবের ফলশ্রুতিতে পরিবেশকে বুঝার এবং খাপখাওয়ার ক্ষমতা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করব।”ডেভিড ওয়েশলার (১৯৭৫) বলেছেন, “বুদ্ধি হল পৃথিবী ও তার সম্পর্কে অনুধাবন করে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করার ক্ষমতা।”David Wechsler (১৯৫৮) এর মতে, “বুদ্ধি হল এমন ক্ষমতা যা দ্বারা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে কাজ করা যায়, যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করা যায় এবং পরিবেশের সাথে উপযুক্তভাবে মোকাবিলা করা যায়।”Alfred Binet এর মতে, বৃদ্ধি হল বোধশক্তির সম্পূর্ণতা, উদ্ভাবনপটুতা, কোন কাজে অধ্যবসায় এবং সমালোচনামূলক বিচারশক্তি।”জন. সি. রাচ (১৯৮৪) বলেছেন, “পৃথিবীকে উপলব্ধি করা এবং বুঝার সামগ্রিক ক্ষমতা হল বুদ্ধি।”মনোবিজ্ঞানী Woodworth এর মতে, “বুদ্ধি হল অতীত শিক্ষণ ও বর্তমান প্রয়োজনের ভিত্তিতে বুদ্ধিমূলক সমস্যা সমাধানের সাধারণ ক্ষমতা।”বাসকিস্ট এবং জারবিং বলেছেন, “বুদ্ধি হল জ্ঞান অর্জনের ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানে ঐ জ্ঞানকে করা।”Knight and Knight বুদ্ধির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “বুদ্ধি হল সব ধরনের মানসিক শক্তি বা ক্ষমতার সাধারণ উপাদান।”আমরা তিনটি Concept এর দিকে তাকালে দেখতে পাই, বুদ্ধির ক্ষেত্রে একটি Common ব্যাপার আছে। যারা দক্ষতার সাথে প্রকৃতির মোকাবিলা করতে পারে তারাই বুদ্ধিমান। অতএব আমরা বলতে পারি, বুদ্ধির তিনটি প্রধান উপাদান রয়েছে। যথা :
প্রথমত, সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং স্বার্থক সমস্যাকে যুক্তিপূর্ণভাবে ব্যাখ্যা ও অধিক সমাধানে যে বা যারা নিশ্চিত করতে পারে তারাই বুদ্ধিমান।দ্বিতীয়ত, চিন্তাকে যারা দৃষ্টান্তের মাধ্যমে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে পারে তারাই বুদ্ধিমান বলে পরিচিত তৃতীয়ত, সামাজিক যোগ্যতা অর্থাৎ, সমাজে বসবাস করতে গিয়ে সকল মানুষের সাথে যারা নিজেকে খাপখাইয়ে নিতে পারে তারাই বুদ্ধিমান।
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলো পর্যালোচনা করে আমরা বলতে পারি যে, বুদ্ধি হল ব্যক্তির সে ক্ষমতা, যা দ্বারা সে বাস্তব জগৎ সম্বন্ধে অবগত হতে পারে, বিভিন্ন ঘটনার সমন্বয় সাধন করতে পারে এবং সমস্যাজনিত পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম বুদ্ধি পরিমাপের জন্য যেসব অভীক্ষা রয়েছে সেগুলোকে ব্যাপকার্থে দু’ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
ক. ব্যক্তিধর্মী জ্ঞান অভীক্ষা এবং দলগত বুদ্ধি অভীক্ষা
ক. ব্যক্তিভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা : যেসব বুদ্ধি অভীক্ষার সাহায্যে একসাথে বেকলমাত্র একজন ব্যক্তির বুদ্ধি পরিমাপ করা যায়, সেসব অভীক্ষাকে ব্যক্তিভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষা বলে। ব্যক্তিভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষার জন্য একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন। তিনি অভীক্ষার্থীর উপর নির্দিষ্ট অভীক্ষা পরিচালনা করেন এবং তার প্রতিক্রিয়াসমূহ রেকর্ড করেন। এ ধরনের অভীক্ষা পরিচালনায় সময় বেশি লাগতে পারে এবং ব্যয়ও বেশি হতে পারে। ব্যয়ভার যদি তেমন গুরুত্ব না পায়, তাহলে ব্যক্তিভিত্তিক অভীক্ষা দলগত অভীক্ষার চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ, এ অভীক্ষায় ব্যক্তির উপর অধিক মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় এবং অধিক পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের কাজ প্রয়োগ করা যায়। ব্যক্তিভিত্তিক বুদ্ধি অভীক্ষাসমূহের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত অভীক্ষা হল স্ট্যানফোর্ড বিনে বুদ্ধি অভীক্ষা এবং ওয়েসলার বৃদ্ধি অতীক্ষা।
খ. দলগত বৃদ্ধি অভীক্ষা : যে বৃদ্ধি অভীক্ষার সাহায্যে অল্প সময়ে বা একসাথে বহুসংখ্যক লোকের বুদ্ধি পরিমাপ করা যায় তাকে দলগত বুদ্ধি অভীক্ষা বলে। দলগত অভীক্ষার বিশেষ প্রয়োজন দেখা দেয় প্রথম মহাযুদ্ধের সময়। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন কর্মে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পরিমাপের জন্য দু’টি দলগত অভীক্ষার প্রবর্তন করা হয়। অভীক্ষা দু’টি হল ‘Army Alpha Test এবং Army Beta Test. Army Alpha Test তৈরি করা হয়েছিল যারা লিখতে ও পড়তে জানে তাদের বুদ্ধি পরিমাপ করার জন্য, কিন্তু Army Beta Test প্রণয়ন করা হয়েছিল উদ্বাস্তু ও বহিরাগত লোকদের জন্য যারা ইংরেজি লিখতে বা পড়তে জানে না বা যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের জন্য।দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত মনোবিজ্ঞানীগণ উন্নত ধরনের অভীক্ষা প্রণয়নের জন্য প্রচুর গবেষণা করে Army General Classification Test, সংক্ষেপে AGCT নামক অভীক্ষাটি উদ্ভাবন করেন। এর দক্ষতা পরিমাপক অভীক্ষাটির সাহায্যে সহজেই কম বুদ্ধি লোক সামরিক বাহিনী থেকে বাদ দেওয়া যেত। বর্তমানকালে অবাঞ্ছিত প্রার্থীদের বাদ দিয়ে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করার জন্য আর একটি উন্নত ধরনের অভীক্ষা Armed Forces Qualification Test ব্যবহৃত হচ্ছে। ব্যবসায় ও শিল্পেক্ষেত্রে বুদ্ধিমান এ সম্ভাবনাময় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে সাড়া জাগানো অভীক্ষাটি হচ্ছে Otis Lenon Mental Ability Test. আবার স্কুল কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে Scholastic Aptitude Test (SAT) এবং School and College Ability Test (SCAT) ইত্যাদি) উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, উভয় প্রকার অভীক্ষাই বুদ্ধির পরিমাপ করে কিন্তু ব্যক্তিগত বুদ্ধি অভীক্ষায় একজন মানুষের সব ধরনের আচরণ সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে দলগত বুদ্ধি অভীক্ষায় তেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে না।