সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের মানুষ হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। পরিবার গঠনের পূর্বশর্ত হলো বিবাহ। বিবাহের সামাজিক ও ব্যক্তিগত তাৎপর্য আছে বলেই প্রত্যেক
সমাজে নানা প্রকার অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে বিবাহ সম্পাদিত হয়। ব্যক্তির যৌন জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে যৌনাচার রোধকল্পেই কতকগুলো বিধিনিষেধ ও সামাজিক রীতিনীতির মাধ্যমে বিবাহ ব্যবস্থার উদ্ভব হয়। তাই বিবাহ সমাজ জীবনে এমনকি ব্যক্তি জীবনে বিবাহের ভূমিকা অপরিসীম। . সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের ভূমিকা : সাধারণত বিবাহের মাধ্যমেই পরিবার গঠিত হয়। আর পরিবারই হচ্ছে সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। আর সামাজিক নিয়ন্ত্রণে পরিবার ও বিবাহের
ভূমিকা অপরিসীম। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের ভূমিকাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু বিকাশ : বিবাহ হলো পরিবার গঠনের পূর্বশর্ত। আর পরিবারের মাধ্যমেই যেহেতু ব্যক্তির বিকাশ হয় সুতরাং বিবাহ অতি প্রয়োজনীয় ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্র। বিবাহের মাধ্যমে মানুষ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।
২. সামাজিক অপরাধ হ্রাস : বিবাহের মাধ্যমে সামাজিক অপরাধ অনেক কমে যায়। যদি বিবাহ সম্পর্কে কোনো আইন বা ব্যবস্থা না থাকত তাহলে সাধারণ মানুষ জোরপূর্বক বা অত্যাচার করে তার যৌন চাহিদা মিটাতো। সেক্ষেত্রে
বিবাহ ব্যবস্থা থাকার জন্য এ অপরাধ অনেক কমে গেছে।
৩. বাল্যবিবাহ হ্রাস : বর্তমান সমাজে বিবাহের একটি নিয়ম এবং আইনকানুন রয়েছে। বাংলাদেশে ছেলেদের ২১ বছর এবং মেয়েদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত বিবাহের বয়স পূর্ণ হয়। এ প্রাপ্ত বয়সের আগে বিবাহ সংগঠিত হলে সেটা
বাল্যবিবাহ হিসেবে পরিগণিত হয়। এ বাল্যবিবাহের অনেক আইন রয়েছে। এ বাল্যবিবাহ রোধে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা : বিবাহ পারিবারিক জীবন শিক্ষা দেয়। ফলে পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় মানুষ নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সমাজের প্রতি ব্যক্তির ভূমিকা সচেতন হয়। আর
বিবাহের মাধ্যমে এ সচেতনতার সৃষ্টি হয়। তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিবাহের ভূমিকা অপরিসীম ।
৫. অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা প্রদান : বিবাহের মাধ্যমে মানুষ অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা পায়। বিবাহের মাধ্যমে পরিবার গঠন করা সম্ভব হয়। পরিবার ব্যক্তির অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করে। সেক্ষেত্রে বিবাহ এখানে মূল একক হিসেবে কাজ করে। ব্যক্তির অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণে সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবাহের গুরুত্ব বা ভূমিকা অনেক।
৬. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা : বিবাহের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা যৌন মিলনে আবদ্ধ হয়। তারা পরিবার গঠনের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন ও লালনপালন করে থাকে। আর বিবাহ নামক এ সামাজিক প্রতিষ্ঠান না থাকলে
পৃথিবী জনশূন্য হয়ে পড়ত। তাই বৈধ উপায়ে সন্তান উৎপাদন করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে।
৭. সুষ্ঠু চিত্তবিনোদনমূলক ব্যবস্থা : পৃথিবীতে বিবাহ ব্যবস্থা না থাকলে মানুষ তার যৌন চাহিদা মিটানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অসামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলত। অসামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজের ও ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত
রুচিহানিকর। তাই বিবাহের ব্যবস্থা থাকায় মানুষ এতটা নিচ এবং খারাপ হয়নি। মানুষ হিসেবে তার চাহিদা মিটানোর জন্য চিত্তবিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বিবাহকে চিহ্নিত করা যায়। সেক্ষেত্রে বিবাহের ভূমিকা অনেক বেশি।
৮. সংস্কৃতি রক্ষা : বিবাহ একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজের মানুষ হিসেবে প্রত্যেক সমাজে কিছু সংস্কৃতি রয়েছে। মানুষ বিবাহের মাধ্যমে সংস্কৃতি রক্ষা করে। বিবাহের মধ্যে বিভিন্ন আনন্দ, উৎসব, রেওয়াজ, রীতিনীতি প্রচলিত আছে। আনন্দ পাওয়ার উপায় হিসেবে বিবাহকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।
৯. সামাজিক ঐক্য সুদৃঢ়করণ : সমাজে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। বিবাহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন রীতি রয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে আমরা একথা বলতে পারি যে, বিবাহ এবং সমাজ একে অপরের পরিপূরক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাই সমাজ জীবনের সাথে ধর্মের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। সমাজ জীবনের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের উৎস হিসেবে বিবাহকে চিহ্নিত করা যায়। তাই বলা যায় যে, সমাজ জীবনে বিবাহ প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।