বিবাহের বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, বিবাহের বিভিন্ন ধরনগুলো আলোচনা কর।
অথবা, বিবাহের প্রকারভেদগুলো আলোচনা কর।
অথবা, বিবাহের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা কর।
সন্তানের
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সমাজে সাংস্কৃতিক জীব। সে হিসেবে সে (মানুষ) যৌন সম্পর্কের স্বীকৃতি, বৈধতা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা প্রভৃতি কারণে মানুষ বিয়ে করে থাকে। সমাজ ও অঞ্চলভেদে মানুষের
সংস্কৃতির ভিন্নতা দেখা যায়। তাই মনোবিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিবাহ ব্যবস্থা রয়েছে আর পতি-পত্নীর সংখ্যাও প্রত্যেক সমাজে ভিন্ন । বিবাহের বিভিন্ন ধরন : পতি-পত্নীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বিবাহকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
১. একক বিবাহ : একজন পুরুষ একজন মহিলার সাথে বিবাহ হলে তাকে একক বিবাহ বলে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জীবদ্দশায় কেউ আর দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারে না। তবে আইনসংগত বা সমাজসংগতভাবে প্রথম বিবাহ ছিন্ন হলে এদের মধ্যে যে কেউ নিজ ইচ্ছায় পুনর্বিবাহ করতে পারে, একে Monogamy marriage বা একক বিবাহ বলে। বর্তমান
বিশ্বের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এ ধরনের বিবাহের সংখ্যা বেশি। এটি পশ্চিমা বিশ্বের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
২. বহুবিবাহ : একাধিক নারী-পুরুষ যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাকে বহুবিবাহ বা Polygamy marriage বলে। এ বিবাহ পদ্ধতিতে একজন পুরুষ যেমন একাধিক মহিলাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে, তেমনি একজন মহিলাও একাধিক পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। সে ভিত্তিতে বহুবিবাহকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।
নিম্নে বহুবিবাহ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. বহুপত্নীক বিবাহ : একজন পুরুষ যদি একাধিক মহিলাকে বিবাহ করে তবে তাকে Polygamy marriage বা বহুপত্নীক বিবাহ বলে । বহুপত্নীক বিবাহের দুটি ধরন আছে। ধরন দুটি নিম্নরূপ :
i. রক্তসম্পর্কীয় বহুস্ত্রী : যখন একজন পুরুষের সাথে একাধিক নারীর বিবাহ হয় এবং তারা সম্পর্কে বোন হলে তাকে রক্তসম্পর্কীয় বহুস্ত্রী (Sororal polygamy) বলে। উত্তর আমেরিকার Crow উপজাতিদের মাঝে এ ধরনের বিবাহ রীতি প্রচলিত আছে।
ii. অরক্তসম্পর্কীয় বহুগ্রী : যখন একজন পুরুষ একাধিক নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং তাদেরযসম্পর্ক বোনের না হলে তাকে অরক্তসম্পর্কীয় বহুস্ত্রী (Non-sororal polygamy) বলে ।
খ. বহুপতি বিবাহ : একজন মহিলার সাথে দুই বা ততোধিক পুরুষের বিবাহ হলে তাকে বহুপতি বিবাহ বলে।
বর্তমান বিশ্বে এ বিবাহ প্রথা খুব কম প্রচলিত।
i. ভ্রাতৃত্বমূলক বহুপতি : যখন এক স্ত্রীর স্বামীরা পরস্পর সম্পর্কে ভাই হয়, তখন তাকে Fracternal polyandry বা ভ্রাতৃত্বমূলক বহুপতি বলে। টোডা ও তিব্বতীয়দের মাঝে এরূপ বিবাহ প্রচলিত আছে ।
ii. অভ্রাতৃত্বমূলক বহুপতি : যখন এক স্ত্রীর স্বামীরা পরস্পর সম্পর্কে ভাই নয় তখন তাকে অভ্রাতৃত্বমূলক বহুপতি বলে। দক্ষিণ ভারতের নায়ারদের মাঝে এ বিবাহ প্রথা দেখা যায় ।
গ. দলগত বিবাহ : একাধিক মহিলা একাধিক পুরুষের মাঝে অনুষ্ঠিত বিবাহকে Group marriage বা গোষ্ঠী বিবাহ বলে । পৃথিবীতে গোষ্ঠী বিবাহ নেই বললেই চলে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিভিন্ন সমাজের আর্থসামাজিক অবস্থার কারণে বিয়ের বিভিন্ন ধরন লক্ষ্য করা যায়। বিয়ের চারটি ধরন। যথা : একক বিবাহ, বহুবিবাহ, দলগত বিবাহ এবং বহুপতি বিবাহ সর্বাধিক প্রচলিত। এ চারটি মৌলিক বিবাহের ধরন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে নানা ধরনের বিবাহ প্রথা প্রচলিত
রয়েছে। এদেরকে A typical marriage বা বিরল ধরনের বিবাহ বলে।