বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর জনসংখ্যার প্রভাব আলোচনা কর।
প্রাকৃতিক পরিবারের উপর জনসংখ্যার ক্ষতিকারক প্রভাবসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, পরিবেশের উপর জনসংখ্যার প্রভাব বর্ণনা কর।
অথবা,উত্তরা৷ ট্মিকা : পরিবেশ হলো অনেকগুলো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা (System) যার মধ্যে
অন্তর্ভুক্ত জনসং অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা, অণুজীব, মাটি, পানি, বাতাস, সবকিছু। মানুষ পরিবেশকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমানে পরিবেশকে এক বিরাট হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। আবার বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বিস্ফোরণ এ প্রক্রিয়াকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। জনসংখ্যার আধিক্য এ দেশে
ব্যাপক পরিবেশগত ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের পরিবেশের উপর জনসংখ্যার প্রভাব : বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা এ দেশের
প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ উভয়েরই উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব : প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর জনসংখ্যার প্রভাব
নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. বনভূমির পরিমাণ হ্রান্স : কোনো দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ তার বনভূমির উপর নির্ভর করে। কোনো দেশের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য কমপক্ষে ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যার বসতবাড়ি, জ্বালানি, নির্মাণ ও আবাসন প্রভৃতির জন্য ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। বর্তমানে এ দেশে মোট ভূমির মাত্র ৮%
বনভূমি রয়েছে। প্রতি বছর ১৩-১৫ লাখ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। সে তুলনায় বনায়নের পরিমাণ অতি নগণ্য। অমৌসুমে
বনাচ্ছাদনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১.৩%, কিন্তু কোনোভাবেই বনকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এর ফলে খরা, অতি বৃষ্টি, অতিরিক্ত শীত, বিভিন্ন জীব ও উদ্ভিদের বিলুপ্তি ঘটছে। আবার অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।১৪৮
২. নদী ও অন্যান্য জলাশয় ভরাট : অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য বসতবাড়ি, দোকান, হাটবাজার,
রাস্তাঘাট প্রভৃতি তৈরির মাধ্যমে নদী ও অন্যান্য জলাশয় ব্যাপক হারে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক মাছের উৎস
ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রজাতীর মাছের বিলুপ্তি ঘটেছে। আবার এসব নদী ও জলাশয় ভরাটের
কারণে ঘন ঘন বন্যা হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
৩. বায়ু দূষণ : বাংলাদেশে অতি সাম্প্রতিককালে ব্যাপক হারে অপরিকল্পিত শহরায়ণ ও শিল্পায়ন হয়েছে, যার ধারা
এখনও অতি দ্রুতগতিতে চলমান। জনসংখ্যার বিরাট অংশ অদক্ষ এবং বেকার হওয়ায় তারা কাজের সন্ধানে শহরে আশ্রয়
নিচ্ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য ব্যবহৃত গাড়ির কালো ধোঁয়া, ও কলকারখানার কালো ধোঁয়া বায়ুকে ব্যাপক মাত্রায়
দূষিত করেছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বায়ু দূষণের নগরী। এর ফলে মানুষের মধ্যে ব্যাপক স্বাস্থ্যজনিত বিপর্যয়
দেখা দিচ্ছে।
৪. পানি দূষণ : অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা মিটাতে গিয়ে শিল্পে অধিক দ্রব্য উৎপাদন করতে হচ্ছে যার বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। এটা নদীর পানিকে ব্যাপক মাত্রায় দূষিত করছে। আবার অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারও পানিকে দূষিত করছে। ফলে মাছের জীব বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে। আবার বর্তমানে
বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানিও নিরাপদ নয়। এতে ব্যাপক মাত্রায় অলৌকিক দূষণ দেখা দিয়েছে।
৫. শব্দ দূষণ : জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বিশেষত বাংলাদেশের শহর অঞ্চলে বিভিন্ন প্রয়োজনে লাউডস্পিকারের ব্যবহার, বিনোদনের আধিক্য, নির্মাণ কাজ প্রভৃতির জন্য ব্যাপক মাত্রায় শব্দ দূষণ ঘটছে যার কারণে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক রোগসহ অনেক স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
৬. মাটি দূষণ : অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রয়োজন মেটানোর জন্য বনভূমি ধ্বংস, কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং বিভিন্ন অপচনশীল দ্রব্যের ব্যবহার মাটির দূষণকে ত্বরান্বিত করছে। এটা মাটির উর্বরতা হ্রাসসহ ব্যাপক পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, জনসংখ্যা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেড়ে গেলে তা সম্পদ না হয়ে আপদে পরিণত হয়। আর এর প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে পরিবেশে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সুতরাং জনসংখ্যা যদি এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে এ ধরনী একসময় বসবাসের যোগ্যতা হারাবে।