চাকমা সমাজের ধর্মীয় সমাজের বিবরণ দাও।
অথবা, চাকমা সমাজের ধর্মীয় দিকগুলো তুলে ধর।
অথবা, চাকমা সমাজের ধর্মীয় দিকগুলো কী কী?
অথবা, চাকমা সমাজের ধর্ম সম্পর্কে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার মোট আয়তন প্রায় ৫,৩০০ বর্গমাইল। এ বিস্তৃত এলাকায় বসবাসরত উপজাতির সংখ্যা অনেক। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। এখানে প্রায় ৩৯ হাজার চাকমা পরিবার বসবাস করে। চাকমাদের ধর্ম : চাকমারা প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তারা বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করে। গ্রাম
এলাকায় মাঝেমধ্যেই বৌদ্ধ মন্দির ক্যাং দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি ক্যাং-এর বৌদ্ধ ভিক্ষু বা শ্রমণ থাকেন যিনি বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন। গ্রামীণ চাকমারা মাঝে মধ্যে জেলা শহরের (যেমন-রাঙামাটিতে মৈত্রী বিহার, আনন্দ বিহার, বনভান্তের বিহার, রাজ বনবিহার) বড় বড় বৌদ্ধ মন্দিরে বড় কোনো ধর্মীয় উৎসবে যোগদান করেন। যেমন-কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনেক চাকমাই বনভান্তের বিহারে গমন করেন। এছাড়া বুদ্ধ মূর্তিকে তারা
প্রদীপ জ্বেলে, ফুল দিয়ে এবং খাদ্য দিয়ে পূজা করে থাকে।
চাকমরা বৌদ্ধ হলেও তাদের মধ্যে আরো দুই ধরনের ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন- চাকমারা গঙ্গা পূজা করে। অর্থাৎ গঙ্গাদেবীকে পূজা করে। তারা লক্ষ্মী পূজাও করে। এই দুটি পূজা হিন্দুধর্মীয় পূজার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। চাকমাদের মধ্যে বিভিন্ন শুভ-অশুভ দেবদেবী নামও বর্তমান। চাকমারা গোজেন নামের ঈশ্বরকে খুবই ভক্তি শ্রদ্ধা
করে। বস্তুত গারোদের তাতারা যেমন সবচেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান দেব বা ঈশ্বর চাকমাদের গোজেন তেমনি ঈশ্বর। তারা বিভিন্ন সময় রোগব্যাধিতে বা ফসল রক্ষার্থে মোরগ এবং শূকর বলি দিয়ে এমন সব পূজা অর্চনার কাজ করে যাতে সর্বপ্রাণবাদের প্রভাব সুস্পষ্ট।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, চাকমারা বৌদ্ধধর্ম বেশ জাঁকজমক সহকারেই পালন করছে এবং মাঝেমধ্যে বৌদ্ধধর্মের উপর সভা-সম্মেলনেরও আয়োজন করছে।