বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাআলোচনা কর।অথবা, বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা আলোচনা কর।অথবা, বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণে গৃহীত ব্যবস্থাসমূহ সম্পর্কে যা জান উল্লেখ কর।উত্তরা৷ ভূমিকা : পরিবেশ নিয়ে বর্তমানে বিশ্বের সর্বত্র ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, উন্নয়ন এবং সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার কিছু পরিবেশগত বিপর্যয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে। আমাদের বাংলাদেশের পরিস্থিতিও অত্যন্ত ভয়াবহ। ব্যাপকভাবে বন্যা নিধন, মাটি, পানি, বায়ু, শব্দ দূষণ এদেশের পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক প্রাকৃতিক ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করেছি। তাই বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণে গৃহীত ব্যবস্থাপনাসমূহ : বাংলাদেশ সরকা, পরিবেশগত বিপর্যয় প্রতিরোধ করার জন্য ২০০২-২০০৩ বাজেটে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের সুপারিশ করে :১. দুই স্ট্রোক ইঞ্জিন ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধ করা;২. শিলাযুক্ত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করা;৩. পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অধীন হাই সালফার ডিজেল আমদানি বন্ধ করে;৪. ইস্টার্ন রিফাইনারির মাধ্যমে শিলাযুক্ত পেট্রোল প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যে আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ শুল্কমুক্ত করা;৫. ডিজেল চালিত নতুন আমদানিকৃত সকল গাড়িতে পটিকুল ফিল্টারের ব্যবস্থা করা;৬. সি. এন. জি চালিত গ্যাসের আমদানি শুল্ক হ্রাস করা এবং৭. পলিথিন ব্যাগ তৈরির কাঁচামালের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করা।এ সিদ্ধান্তগুলোর প্রায় সবগুলোই কমবেশি বাস্তবায়িত হয়েছে।২০০৩-২০০৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবেশ খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় শুধু এ খাতের বিশেষ গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশই গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।” এ লক্ষ্যে তিনি সরকারের গৃহীত কিছুপদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। সে পদক্ষেপগুলো নিম্নরূপ :১. ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের ২০ শতাংশ এলাকা বনায়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।২. ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার ওবাজারজাতকরণ নিষিদ্ধকরণ করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি, ২০০৩ হতে রাজধানীতে দুই স্ট্রোকবিশিষ্ট থ্রি-হুইলার যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করেছে।৪. যানবাহনের পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি সি.এন.জি. ব্যবহারের সুযোগ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পর্যাপ্তসংখ্যক সি. এন. জি স্টেশন স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।৫. পরিবেশ দূষণজনিত অপরাধ দ্রুত বিচারকল্পে দেশে প্রথমবারের মতো পরিবেশ আদালত গঠন করা হয়েছে।৫ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নরূপ :ক. দূষণ নিয়ন্ত্রণে কারিগরি জ্ঞানের অধিকারী জনবল প্রশিক্ষণ,খ. স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিবেশ শিক্ষা এবং জনগণের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি,গ. ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা,ঘ. পানি সম্পদের কাম্য ব্যবহার,ঙ. উপকূলীয় ও সামাজিক বনায়ন,চ. প্রাণী সম্পদ সংরক্ষণ,ছ. বন্য প্রাণী সংরক্ষণ,জ. জীব বৈচিত্র্য এবং ভূমি সংরক্ষণের মাধ্যমে কৃষিসম্পদ ভিত্তির উন্নয়ন,ঝ. উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ,ঞ. শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণ,.ট. জীবিত জলজ সম্পদ সংরক্ষণ এবংঠ. দুর্যোগ প্রতিরোধ পদক্ষেপ গ্রহণ ।উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা হতে দেখা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এক্ষেত্রে আরো জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।