প্রতিবেশ প্রক্রিয়ার প্রাণহীন জড় কাঠামোর সম্বন্ধে আলোচনা কর।
অথবা, প্রতিবেশ প্রক্রিয়ার প্রাণহীন জড় কাঠামোর শ্রেনিবিভাগগুলো আলোচনা কর।
অথবা, জড় কাঠামো কত প্রকার? আলোচনা কর।
অথবা, প্রতিবেশ প্রক্রিয়ার প্রাণহীন জড় কাঠামোর সম্পর্কে যা জান উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিবেশ হলো বস্তুগত ও অবস্তুগত, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান, সকল উপাদানের সমষ্টি। আর প্রতিবেশ হলো প্রাণীর সাথে পরিবেশের আন্তঃসম্পর্কের অধ্যয়ন। সুতরাং, বিষয়ভিত্তিক ও অস্তিত্বগতভাবে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান। প্রতিবেশের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিলে তা সমগ্র প্রতিবেশ এবং
বৃহত্তরভাবে পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রাণহীন জড় উপাদান : প্রতিবেশের প্রক্রিয়ার প্রাণহীন জড় উপাদান হচ্ছে কতকগুলো ভৌত ও রাসায়নিক নিয়ামক যেগুলো জীবন্ত অণুজীব বা জীব কোষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। নিম্নে এগুলো কার্যাবলিসহ আলোচনা করা হলো :
ক. ভৌত নিয়ামক :
১. জলবায়ু (আবহাওয়া)
২. মাটি
৩. ভূমিরূপ
৪. আগুন
৫. পানি
খ. রাসায়নিক নিয়ামক :
১. পরিপোষক
২. আপেক্ষিক অম্লত্ব
৩. লবণাক্ততা৪২
১. জলবায়ু (আবহাওয়া) : কোন এলাকায় সারা বছরব্যাপী দৈনিক বৃষ্টিপাত বা অধঃক্ষেপ এবং গড় তাপমাত্রাকে ঐ যায় মেরু অঞ্চলে খুবই ঠাণ্ডা এবং বিষুবীয় অঞ্চলে অপেক্ষাকৃত গরম। কোন নির্দিষ্ট জলবায়ুতে ঐসব প্রজাতির উদ্ভিদ ও এলাকার জলবায়ু বলে। এসব মান ৩০ বছরের গড় মানের উপর নির্ভর করে। ভূমণ্ডলীর জলবায়ু বিবেচনা করলে দেখা
প্রাণীকূলই টিকে থাকবে যারা ঐ অঞ্চলের জলবায়ু সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।
২. মাটি : মাটিতে গাছপালা জন্মায়, মাটি মরুময় কিংবা উর্বরা দুইই হতে পারে। মাটি ৩টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি গতিশীল ব্যবস্থা, যেমন-
ক. খনিজ কণা,
খ. ক্ষয়প্রাপ্ত গুড়া অংশ এবং
গ. ক্ষয়প্রাপ্ত শুকনা গুড়া অংশ খেয়ে জীবনধারণ করে এমন জীব কোষ ।
মাটির বিভিন্ন অবস্থা বিভিন্ন শ্রেণির গাছপালা জন্মানো জীবকোষের বসবাসের উপযোগী। মৃত গাছপালা, লতাপাতা মূল, শুকনা ঘাস, প্রাণীর শুকনা পায়খানা এবং মৃত প্রাণী মাটির উপর জমা হয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত গুড়া অংশ তৈরি করে। যেসব জীবকোষ বা অণুজীব মাটি খায় তারা মাটির খনিজ অংশ ছাড়া বাকি অংশটুকু খায় ।
জীবকোষ কর্তৃক ক্ষয়প্রাপ্ত অংশটুকু খাওয়ার পর জৈব পদার্থের যে কাল অবশেষ পড়ে থাকে তাকে ‘হিউমাস’ বলে। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ হিউমাস দায়ী। মাটিতে এ জৈব পদার্থের এবং ক্ষয়প্রাপ্ত গুড়া অংশের উপস্থিতির একটি জটিল খাদ্য জাল এবং বিভিন্ন জীবকোষ, যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, প্রটোজোয়া, কীটপতঙ্গ, সাপ, বিচ্ছু,
মাকড়সা, কেঁচো ইত্যাদির সৃষ্টি ও জীবনধারণ নিশ্চিত করে।
৩. ভূমিরূপ : কোন অঞ্চলের জলবায়ু, পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা এবং গাছপালা জন্মানোর ক্ষমতা অর্থাৎ, উর্বরা শক্তিকেৎপ্রভাবিত করতে পারে এমন তিন ধরনের ভূমিরূপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেমন-
ক. ঢাল (Slope)
খ. অবয়ব (Aspect)
গ. উন্নতি (Elevation)
অনুভূমিক তলের সাথে উন্নতির মাত্রাকে ঢাল বলে। খাড়া ঢালুতে (৬০°) কিছু কিছু উদ্ভিদ জন্মাতে পারে না। তাছাড়া খাড়া ঢালু ভূমির পানির ধারণ ক্ষমতা কম থাকে এবং তাড়াতাড়ি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অবচয় হচ্ছে কম্পাসের কাটার সাপেক্ষে মাটির ঢালের দিক। যেমন- পশ্চিমমুখী ঢাল, উন্নতি হচ্ছে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ভূমির উচ্চতা, ভূমির উচ্চতার উপর গাছপালা ও অন্যান্য জীবকোষের অস্তিত্ব নির্ভর করে।
৪. আগুন : আগুন এমন একটি উপাদান যা কোন অঞ্চলে কোন কোন সময় ধীরগতিতে অথবা আকস্মিকভাবে, কোন বিশেষ প্রজাতির পরিমাণগত পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। এর ফলে কোন প্রজাতির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে আবার কোন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। প্রাকৃতিক অথবা জঙ্গলে সৃষ্ট দাবানল ইকোসিস্টেমের ধ্বংসের কারণ হয়।
৫. পানি : পানি যেমনিভাবে একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সাহায্য করে, তেমনিভাবে পানির স্বাভাবিক অবস্থার আকস্মিক পরিবর্তন কোন ইকোসিস্টেমের ক্ষতিও করতে পারে। পানি স্রোত বৃদ্ধি, আকস্মিক বন্যা, জলোচ্ছ্বাস লজ ইকোসিস্টেমের জন্য ক্ষতির কারণ হয়।
১. পরিপোষক : পরিপোষক কোন প্রতিবেশে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। উৎপাদক কর্তৃক সূর্যালোক শোষিত হয় এবং তা ব্যবহারের পর তাপ হিসেবে তা যুক্ত হয়। এখানে যা বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে আসে তা অন্য কোন প্রজাতির পরিপোষক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এভাবেই প্রতিবেশ টিকে থাকে।
২. আপেক্ষিক অম্লত্ব : বৃষ্টির পানি স্বাভাবিক অম্লত্ব ছাড়িয়ে গেলে তা উদ্ভিদ, প্রাণী ও অন্যান্য জীব কোষের জন্য বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। বর্তমানে শিল্পোন্নত দেশগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০-১০০০ গুণ অম্লত্ব গুণসম্পন্ন দৃ“পাতের ঘটনা ঘটছে। শিল্পকারখানা থেকে নির্গত সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে বাষ্প ও
হাইড্রোক্সিল মৌলের (OH) সাথে বিক্রিয়া করে এসিড তৈরি করছে যা শুষ্ক অথবা বৃষ্টির পানির সাথে মিশে মাটিতে কিংবা নদী-নালা-পুকুর-খাল-বিলের পানিতে পড়ছে।
মতো কিছু প্রাণী আছে যারা অল্পমাত্রার P” মানের মাটিতে (২.৮–৩.৪) বেঁচে থাকতে পারে না। বেশিরভাগ গাছপালা ও প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য এমন পরিবেশ দরকার যেখানে pH মান সন্তোষজনক। কোচের৩. লবণাক্ততা : জমিতে ঘন ঘন সেচ দিলে লবণাক্ততার সৃষ্টি হতে পারে। এ লবণাক্ততার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেলে উদ্ভিদ ও জীবের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ হ্রাস করতে হলে
টাটকা পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পরিবেশ ও প্রতিবেশের মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে সাদৃশ্য বিরাজমান। কারণ এটা একটা অন্যটার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তবে এদের মধ্যে যে তফাৎ নেই তা বলা যায় না। এছাড়া প্রতিবেশের প্রক্রিয়ার দিকে নজর দিলেও এ বিষয়ে সার্বিক ধারণা পাওয়া যায়।