প্রতিবেশ প্রক্রিয়ার জৈবিক কাঠামো আলোচনা কর।
অথবা, প্রতিবেশ প্রক্রিয়ার জৈবিক কাঠামোগুলোর শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
অথবা, প্রতিবেশ প্রক্রিয়ার জৈবিক কাঠামোর পরিচয় উল্লেখ কর।
অথবা, প্রতিবেশ প্রক্রিয়ার জৈবিক শ্রেণিবিন্যাসসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর ভূমিকা : পরিবেশ হলো বস্তুগত ও অবস্তুগত, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান, সকল উপাদানের সমষ্টি। আর প্রতিবেশ হলো প্রাণীর সাথে পরিবেশের আন্তঃসম্পর্কের অধ্যয়ন। সুতরাং, বিষয়ভিত্তিক ও অস্তিত্বগতভাবে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান । প্রতিবেশের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিলে তা সমগ্র প্রতিবেশ এবং
বৃহত্তরভাবে পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রতিবেশের প্রক্রিয়া : প্রতিবেশের প্রক্রিয়াকে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : (ক) জৈবিক কাঠামো ও
(খ) প্রাণহীন জড় কাঠামো। জৈবিক কাঠামো : প্রতিবেশের জীবন্ত জীবকোষসমূহকে খাদ্য গ্রহণের পদ্ধতি অনুসারে প্রধানত ২ শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয় । যথা : ১. উৎপাদক ও ২. ভোক্তা।
১. উৎপাদক : যেসব জীবকোষ নিজেরাই নিজেদের খাদ্য তৈরি করে এবং গ্রহণ করে তাদেরকে উৎপাদক বলে। উৎপাদকসমূহ তাদের নিজস্ব পরিবেশে অজৈব যৌগ থেকে তাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় জৈব পরিপোষক (Organic Nutrients) তৈরি করে নিতে পারে। বেশিরভাগ স্থলজ ইকোসিস্টেমে সবুজ গাছপালাগুলো হচ্ছে উৎপাদক। জলজ
ইকোসিস্টেমে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফাইটোপ্লাঙ্কটন, ভাসমান এবং পানির নিচের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য আণুবীক্ষণিক বা জীবকোষ উৎপাদক হিসেবে কাজ করে। কেবলমাত্র উৎপাদকগণই তাদের নিজেদের খাবার নিজেরা তৈরি করে। অন্যান্য জীবকোষগুলোর উৎপাদকসমূহের তৈরিকৃত খাদ্যের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। বেশিরভাগ উৎপাদক তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য জৈব পরিপোষক সূর্যের আলোর ব্যবহারের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় তৈরি করে যদিও
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শত শত রাসায়নিক পরিবর্তন সংগঠিত হয়। সার্বিক নীট পরিবর্তন নিচে দেওয়া হলো : 6CO2 + 6H2O + Solar energy → C6H12 O6 + 602 কিছু বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া উৎপাদক আছে যারা সূর্যের আলো ছাড়াই তাদের পরিবেশ থেকে অজৈব যৌগ থেকে জৈব পরিপোষক তৈরি করতে পারে তাকে ক্যামাসিন
থেসিস বলে। এক্ষেত্রে শক্তির উৎস হচ্ছে তাপ যা পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে তেজস্ক্রিয় পদার্থের গঠন প্রক্রিয়ার উৎপন্ন হয় এবং সমুদ্রের গভীরে ফাটল দিয়ে বের হয়ে আসে।২. ভোক্তা : যেসব জীবন্ত জীবকোষ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে পরনির্ভর অর্থাৎ, যারা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জৈব
পরিপোষক অন্য কোনো উৎপাদকের কাছ থেকে পেয়ে থাকে তাদেরকে ভোক্তা বলে। বিভিন্ন শ্রেণির ভোক্তা রয়েছে। যেমন-
i. উদ্ভিদভোজী : এরা প্রথম পর্যায়ের ভোক্তা। কারণ সরাসরি উৎপাদক তথা সবুজ উদ্ভিদ অথবা উদ্ভিদজাত উৎপাদ
খেয়ে জীবনধারণ করে।
ii. মাংসাশী : এরা অন্য ভোক্তাদের খেয়ে জীবনধারণ করে। এদেরকে দ্বিতীয় ভোক্তাও বলা হয়। কেননা, এরা প্রথম পর্যায়ের ভোক্তাদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। বেশিরভাগ দ্বিতীয় পর্যায়ে ভোক্তারা প্রাণীবিশেষ। তবে অল্পকিছু দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোক্তা পোকা জাতীয় ৷ অন্যদিকে, তৃতীয় পর্যায়ের ভোক্তারা অন্যান্য প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোক্তাদের খেয়ে জীবনধারণ করে। উদ্ভিদভোজী ও মাংসাশী : এরা প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয়ই খেয়ে থাকে। যেমন— ইঁদুর, শুয়োর, শৃগাল, তেলাপোকা এবং মানুষ ।
মৃত ক্ষয়প্রাপ্ত উদ্ভিদ বা মৃত প্রাণী পচা কিংবা টাটকা ইত্যাদি খেয়ে জীবনধারণ করে। যেমন- কেঁচো, ঘুনে পোকা,ৎপিপড়া ইত্যাদি এ ধরনের ভোক্তা।
i. পঁচিক : এরা মৃত শুকনা ক্ষয়প্রাপ্ত উদ্ভিদের মধ্যে জটিল জৈব যৌগগুলোকে সরল অজৈব যৌগে পরিণত করে তার দ্রবীভূত পরিপোষকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এ পাঁচক জীবকোষগুলো হলো ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক। এগুলো মাটি এবং পানিতে বসবাসকারী কীটপতঙ্গের একটা উল্লেখযোগ্য খাদ্য উৎস। যে কোন স্বতন্ত্র জীবকোষের অস্তিত্ব তার দেহের মাধ্যমে পদার্থ ও শক্তি প্রবাহের উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে, কোন ইকোসিস্টেমের জীবকোষসমূহ পদার্থের পুনরাবর্তন এবং একমুখী শক্তি প্রবাহের উপর নির্ভর করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে।
পাঁচক জীবকোষগুলো মৃত, শুষ্ক, ক্ষয়প্রাপ্ত উদ্ভিদকে ভেঙে অজৈব পরিপোষকে পরিণত করে তাদের পদার্থ পুনরাবর্তন চক্রটি পূর্ণ করে । পাঁচক জীব কোষের অনুপস্থিতিতে গোটা পৃথিবী আবর্জনা, মৃত, পাঁচ-গলা প্রাণী ইত্যাদিতে ভরে যেত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রতিবেশ কাঠামো হলো নির্দিষ্ট পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য সংগঠিত এবং আঞ্চলিক বণ্টনকে বুঝায় । প্রতিবেশ কাঠামো গড়ে উঠার কতকগুলো প্রক্রিয়া রয়েছে। যেসব প্রক্রিয়ায় কোন একটা বিশেষ স্থানে বিশেষ পরিবেশ বা প্রতিবেশ কাঠামো গড়ে উঠে, সেগুলোকে প্রতিবেশ প্রক্রিয়া বলা হয়।