বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর ভূমিকা : ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলাদেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা আজ তৃতীয় বিশ্বের প্রথম দেশ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তুলনা ইতিহাসে বিরল, সুসংগঠিত পাক বাহিনীর সাথে অসম সংগ্রামে বাংলার দামাল ছেলেরা শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয় এবং বহু বাধা বিপত্তি
অতিক্রম করে অবশেষে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য পুষ্ট হয়ে বাংলাদেশকে পশু শক্তির কবল থেকে মুক্ত করতে সক্ষম
হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা : মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার মুজিব বাহিনী ও
মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি আরো উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনীর গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ই. পি. আর, এর বাঙালি সৈনিকসহ শিক্ষিত তরুণদের নিয়ে স্থল, নৌ এবং বিমান বাহিনী গঠন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১১টি সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর পাশে থেকে বিভিন্ন জেলায় আক্রমণ পরিচালনা করে। নৌ-বাহিনীর বহু অফিসার ও নাবিককে নিয়ে নৌকমান্ডো গঠন করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌ-মুক্তিযোদ্ধারা অনন্য
সাধারণ ইতিহাস সৃষ্টি করে। তারা চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশাল, চালনা প্রভৃতি বন্দরে সফল অভিযান পরিচালনা করে। তারা আগস্ট থেকে নভেম্বরের মধ্যে শত্রু পক্ষের বহুসংখ্যক জাহাজ নিমজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং বেশ কয়েকটি শত্রু নৌযান দখল করতে সক্ষম হয়। এয়ার কমোডোর এ. কে. খন্দকার বিমান বাহিনী পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে
গেরিলা বাহিনী ও নিয়মিত বাহিনীর সমর্থনে বিমান বাহিনী কয়েকটি সাফল্যজনক অভিযান চালায়। ৩ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের যেসকল বিমান আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছিল তার প্রথম আক্রমণের কৃতিত্ব বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়েই শুরু হয়। এভাবেই সশস্ত্র বাহিনীর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব পেয়েছি।