১১ দফা দাবির পটভূমি লিখ।
অথবা, ১১ দফা দাবি সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, ১১ দফা দাবির প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, ১১ দফা দাবির প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আইয়ুব দশকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মূল্যায়নে যখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ব্যতিব্যস্ত তখন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উক্ত দশকের শোষণনীতি ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে ছাত্রসমাজের এগারো দফা দাবি পেশ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এ শোষণনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। ১১ দফার ভিত্তিতেই তদানীন্তন পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্রসমাজ ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ্য ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। ১১ দফা দাবির পটভূমি : ১৯৬৬ সালের ছয়দফা কর্মসূচির প্রভাবে পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে যে সংগ্রামী ঐক্য গড়ে উঠে, তা পশ্চিমা শাসক এলিটদের শঙ্কিত করে তোলে। তাই তারা বাঙালির স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছয়দফাকে চিরতরে নসাৎ করার জন্য চক্রান্ত শুরু করে এবং দমননীতি চালায়। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে এক গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেন। তাই সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ছয়দফা আন্দোলনের জন্য ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার’ অভিযোগে অভিযুক্ত ও দেশরক্ষা
আইনে আটক শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি বেকসুর খালাস প্রদান করা
হয়। কিন্তু ১৮ জানুয়ারি জেল গেটের বাইরে পা রাখার সাথে সাথেই তাঁকে ‘পাকিস্তান আর্মি, নেভী এবং এয়ারফোর্স অ্যাক্ট এ
গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সমগ্র পাকিস্তান যখন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে মুখর, তখন ১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ডাকসু কার্যালয়ে
তৎকালীন ডাকসু সহ-সভাপতি তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ (East Pakistan Student’s League- EPSL), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (East Pakistan Student’s Union – EPSU) এবং জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন (National Student’s Federation – NSF) এর একাংশ সম্মিলিতভাবে একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। এ
ফ্রন্টের নামকরণ করা হয় ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ উক্ত তারিখেই ছয়দফাকে সাথে নিয়ে ছাত্র-
শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের দাবি সংবলিত ‘১১ দফা কর্মসূচি’ ঘোষণা করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয় ১১ দফা দাবির কার্যক্রম। এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন ১১ দফার ভিত্তিতে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এ সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে ১১ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে।