ভাষা আন্দোলন বলতে কী বুঝ?
অথবা, ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, ভাষা আন্দোলন কী?
অথবা, ভাষা আন্দোলন কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের ১৪/১৫ আগস্ট ব্রিটিশ শাসিত অখণ্ডভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও
পাকিস্তান নামে দুটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর তৎকালীন পূর্ব বাংলার জনগণ
যেসব রাজনৈতিক আন্দোলন করেছিল, সেগুলোর মধ্যে ভাষা আন্দোলনই ছিল সবচেয়ে ব্যাপক, তীব্র ও গুরুত্বপূর্ণ।
ভাষা আন্দোলন (Language Movement) : আমরা সহজভাবে বলতে পারি, পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা দিলে, বাঙালি জাতি তাদের মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে যে আন্দোলন করেছিল তাই ভাষা আন্দোলন। মাত্র ১৭ দিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ১ সেপ্টেম্বর ৩ সদস্যবিশিষ্ট
তমদ্দুন মজলিস গঠিন করেন। এ তমদ্দুন মজলিস রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সর্বপ্রথম পরিকল্পিত
ও সুসংগঠিত আন্দোলন শুরু করে তমদ্দুন মজলিস গঠন করা হয়।
অবশ্য ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় পৌছে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তখন তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমউদ্দীন জিন্নাহর ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সেসময় এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অবশেষে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক জব্বারদের রক্তের বিনিময়ে রক্ষিত হয় রাষ্ট্রভাষা
বাংলার সম্মান। পরবর্তীতে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করল ১৯৫৬ সালের সংবিধানে। বর্তমানে এ ভাষাৎআন্দোলনের মহান ২১ ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। আর এই ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই এদেশের মানুষ দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দীক্ষা পায় যা মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগায়। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে ধাপে ও স্তরে স্তরে প্রেরণা যুগিয়েছে ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলন সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও এ আন্দোলনের ফলেই বাঙালি জায়ীতাবাদের বিকাশ ঘটে, প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।