অথবা, যোগদর্শনে কৈবল্য বলতে কী বুঝ?
অথবা, যোগদর্শনে কৈবল্য কী?
অথবা, যোগদর্শনে কৈবল্য কাকে বলে?
‘অথবা, যোগদর্শনে কৈবল্যের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : মহর্ষি পতঞ্জলি যোগদর্শনের প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা। মহর্ষি পতঞ্জলির নামানুসারে এ দর্শনের নাম পাতঞ্জল দর্শন। পাতঞ্জল দর্শনকে সাংখ্য প্রবচন নামেও অভিহিত করা হয়। তার কারণ, মহর্ষি পতঞ্জলি কপিল মুনি প্রবর্তিত সাংখ্যমত স্বীকার করে সাংখ্য প্রবর্তিত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব; যথা : পুরুষ, প্রকৃতি, মহত্তত্ত্ব, অহংকার, পঞ্চতন্মাত্র,
একাদশ ইন্দ্রিয় এবং পঞ্চ মহাভূত স্বীকার করেছেন। পূর্বোক্ত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব ছাড়া আরো একটি তত্ত্ব পাতঞ্জল দর্শনে স্বীকৃত হয়েছে। এ তত্ত্বটি হলো ঈশ্বর তত্ত্ব। এ কারণে পাতঞ্জল দর্শনের অপর নাম ‘সেশ্বর-সাংখ্য।’
কৈবল্যের স্বরূপ : পুরুষ বা আত্মার স্বরূপে অবস্থানই কৈবল্য বা মুক্তি। পুরুষ স্বভাবতই নিত্যমুক্ত। তাই আসলে তার বন্ধন নেই এবং মুক্তিও নেই। কিন্তু অবিদ্যার কারণে পুরুষের বন্ধন এবং তা হতে মুক্তির প্রশ্ন দেখা দেয়। বুদ্ধির ধর্ম যখন পুরুষে প্রতিবিম্বিত হয় তখন পুরুষ ভ্রমবশত বুদ্ধির ধর্মকে নিজের বলে মনে করে, নিজেকে ভোক্তা বা কর্তা বলে মনে করে এবং নিজেকে বুদ্ধির সাথে অভিন্ন বলে মনে করে। এটিই পুরুষের বন্ধন বা বন্ধাবস্থা ।
যোগদর্শন বর্ণিত ত্রিতাপও (যথা : পরিণাম দুঃখ, তাপ দুঃখ এবং সংস্কার দুঃখ) অবিদ্যার জন্য। এই অবিদ্যার জন্যই স্রষ্টা পুরুষ ও দৃশ্য প্রকৃতির সংযোগ ঘটে এবং এই সংযোগের ফলে দুঃখের উদ্ভব হয়। যে অবিদ্যা বন্ধন এবং দুঃখের কারণ, সেই অবিদ্যাকে দূরীভূত করতে না পারলে পুরুষ বা আত্মার মুক্তি তথা দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব নয়। যোগাচার্যগণ বলেন, ‘বিবেকখ্যাতি’ এই অবিদ্যাকে দূরীভূত করতে পারে। ‘বিবেকখ্যাতি’ বলতে যোগাচার্যগণ বুদ্ধি ও পুরুষের ভিন্নতা সম্পর্কে প্রখ্যাত জ্ঞানকেই
বুঝিয়েছেন। যোগাচার্যগণ বলেন, যোগ সাধনার দ্বারা যোগীর চিত্তের মলিনতা এবং অশুদ্ধতা দূর হলে যোগীর এই বিবেকখ্যাতি জন্মে। বিবেকখ্যাতি লাভ করলে যোগী আত্মার প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন। তখন বুদ্ধির ধর্ম বা বৃত্তি আর পুরুষে প্রতিবিম্বিত হয় না এবং পুরুষ স্বরূপে অবস্থান করে, অর্থাৎ পুরুষ কেবল বা নির্বিকার হয়। পুরুষের এই অবস্থাই কৈবল্য বা মুক্তি। কৈবল্য
প্রাপ্তির পর পুরুষের দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তি হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কৈবল্য বা মোক্ষের অবস্থাকে অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে আনন্দময় অবস্থা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সাংখ্য যোগদর্শন কৈবল্যের অবস্থাকে আনন্দময় অবস্থা বলে না। তবে কৈবল্য যে দুঃখের আত্যন্তিক নিবৃত্তির অবস্থা, এটি সাংখ্য ও যোগদর্শন স্বীকার করেছে।