যোগদর্শন কী?

অথবা, যোগদর্শন বলতে কী বুঝ?
অথবা, যোগদর্শন কাকে বলে?
অথবা, যোগদর্শনের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, যোগদর্শন সম্পর্কে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের আস্তিক সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে যোগদর্শন সম্পূর্ণ নিজস্ব চিন্তার আলোকে দার্শনিক আলোচনা করেছে এবং সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যাবলি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছে। নিম্নে প্রশ্নের আলোকে আমাদের আলোচ্যবিষয় আলোচনা করা হলো :
যোগদর্শন : মহর্ষি পতঞ্জলি যোগদর্শনের প্রবর্তক এবং প্রতিষ্ঠাতা। মহর্ষি পতঞ্জলির নামানুসারে এ দর্শনের নাম পাতঞ্জল দর্শন। পাতঞ্জল দর্শনকে সাংখ্য প্রবচন নামেও অভিহিত করা হয়। তার কারণ, মহর্ষি পতঞ্জলি কপিল মুনি প্রবর্তিত সাংখ্যমত স্বীকার করে সাংখ্য প্রবর্তিত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব যথা : পুরুষ, প্রকৃতি, মহত্তত্ত্ব, অহংকার, পঞ্চতন্মাত্র,
একাদশ ইন্দ্রিয় এবং পঞ্চ মহাভূত স্বীকার করেছেন। পূর্বোক্ত পঞ্চবিংশতি তত্ত্ব ছাড়া আরো একটি তত্ত্ব পাতঞ্জল দর্শনে স্বীকৃত হয়েছে। এ তত্ত্বটি হলো ঈশ্বর তত্ত্ব। এ কারণে পাতঞ্জল দর্শনের অপর নাম ‘সেশ্বর-সাংখ্য।’
‘যুজ’ ধাতু থেকে ‘যোগ’ শব্দের উৎপত্তি। ‘যুজ’ ধাতুর অর্থ ‘সংযোগ বিধান করা’ ও ‘চিত্ত সমাধান করা’। পতঞ্জলির যোগসূত্রে ঈশ্বরের সাথে জীবাত্মার সংযোগ অর্থে যোগশব্দ ব্যবহৃত হয় নি। চিত্তবৃত্তির নিরোধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। চিত্তের বৃত্তিগুলোকে একান্তভাবে রুদ্ধ করার নামই যোগ।
‘যোগসূত্র’ বা ‘পাতঞ্জল সূত্রই’ পাতঞ্জল দর্শনের মূল গ্রন্থ। বেদব্যাস বিরচিত ‘ব্যাসভায্য’ পাতঞ্জল দর্শনের উপর একখানি অতি মূল্যবান প্রাচীন ভাষ্য। বাচস্পতি মিশ্রের ‘তত্ত্ব বৈশারদী’ ও বিজ্ঞান ভিক্ষুর’ যোগ-বার্তিক ব্যাসভাষ্যের প্রামাণ্য টীকা। ভোজরাজ্যের ‘বৃত্তি’ এবং রামানন্দ সরস্বতীর ‘যোগ-মণিপ্রভা যোগদর্শনের দুই উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এছাড়াও
যোগদর্শনের অনেক গ্রন্থাবলি রয়েছে।’
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, যোগদর্শন মতে, আত্মা, দেহ, মন ও বুদ্ধির অতিরিক্ত এক বিশুদ্ধ চৈতন্যময় আধ্যাত্মিক সত্তা। যোগদর্শন আত্মার মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে খুব সুন্দর এবং প্রাঞ্জল ভাষার আলোকে আলোচনা করেছে।
যোগদর্শন সাধারণ মানুষের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করতে পারে। সকল রকম রহস্যময়তা দূর করে দিয়ে ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সত্যানুসন্ধানের প্রেরণা দেয় এই যোগদর্শন।