অথবা, জনমুখী সামাজিক কার্যক্রম মডেল কী?
অথবা, জনমুখী সামাজিক কার্যক্রম মডেল কাকে বলে?
অথরা, জনমুখী সামাজিক কার্যক্রম মডেল সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : জনমুখী সামাজিক কার্যক্রম মডেল পরিচালিত হয় কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি কর্তৃক জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। এই সামাজিক কার্যক্রমে জনগণই মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। এ প্রসঙ্গে ব্ৰিটো বলেছেন, “জনমুখী সামাজিক কার্যক্রম হচ্ছে সমঝোতা বা সংঘাতের পথে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চেষ্টা করা। এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যায় অবিচার, সংস্থা, নীতি, কর্মপদ্ধতি ও অন্যায়কারী এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে অভিজাত শ্রেণি থাকে পথপ্রদর্শক হিসেবে।
প্রচলিত সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন সাধন, নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা এর মূল লক্ষ্য।”(H.Y. Siddiqui ) |
জনমুখী সামাজিক কার্যক্রম মডেল : জনমুখী সামাজিক কার্যক্রমের তিনটি উপমডেল রয়েছে। এগুলো হলো :
১. সরাসরি উদ্বুদ্ধকরণ মডেল (Direct mobilization model) : এ ধরনের মডেলে জনগণকে আকৃষ্ট করা এবং জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে এবং একজন জনমত গঠন করেন। তারা ধর্মঘট, প্রতিবাদ, আন্দোলন প্রভৃতি কৌশলের আশ্রয় নিয়ে জনগণকে সমস্যা সমাধানে উদ্বুদ্ধ
করেন। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা সমস্যার মূল কারণ বিশ্লেষণ, এজন্য নীতি নির্ধারণ ও কর্মপ্রক্রিয়া ঠিক করেন। তাঁরা মূল লক্ষ্য
অর্জনের জন্য জনগণকে আকৃষ্ট করেন এবং কাজে গতি সঞ্চার করনের ব্যবস্থা করেন।
২: দ্বান্দ্বিক উদ্বুদ্ধকরণ মডেল (Dialectical mobilization model) : সামাজিক কার্যক্রমের এটি একটি অন্যতম মডেল হিসেবে বিবেচিত। এর মূল লক্ষ্য হল-তর্ক বিতর্ক সৃষ্টি, পক্ষ বিপক্ষ আহ্বান, পারস্পরিক সংঘাত প্রভৃতির মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা, এর ফলে যৌক্তিক ব্যাখার মাধ্যমে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সামাজিক কার্যক্রমের এই
মডেলে যুক্তিপূর্ণ বিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে পক্ষ ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সমঝোতা গঠিত হয়। এক্ষেত্রে সুচিন্তিত যুক্তি কল্যাণকর (Thesis) এবং অন্য পক্ষ বিরোধী (Antithesis) ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ফলশ্রুতিতে যে সমঝোতা বা ঐক্যমত্য গঠিত হয় তা Synthesis পরিচিত। সামাজিক কার্যক্রমের এই মডেলে জনগণের কল্যাণে সমাজকর্মীগণ ইতিবাচক ফল পেয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ব্রিটো বলেছেন, “Dialectical model promoting conflict to exploit the
contradictions in a system, with the belief that a better system will emerge as a result.”
৩. বিবেকবোধ সৃষ্টিকরণ মডেল (Conscientization model) : সামাজিক কার্যক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল হলো বিবেকবোধ সৃষ্টিকরণ মডেল। এই মডেলের মূল কথা হলো অত্যাচারী ও অত্যাচারকারী উভয়ের বিবেকাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত করা। এক্ষেত্রে শিক্ষার মাধ্যম নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষ সচেতন হবে, অন্যদিকে অত্যাচারকারী ও নির্যাতনকারীদেরও বিবেকবোধ জাগ্রত হয়ে সংশোধিত হবে।
উপসংহার : সামাজিক কাক্রমের যেসব মডেল রয়েছে সেগুলো সামাজিক আইন প্রণয়ন, সামাজিক নীতির সংশোধন ও সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখে।