UNSCO-এর পরিচয় দাও। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ কি? এর প্রশাসনিক কাঠামো লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা ঃ জাতিসংঘের অন্যতম বিশেষায়িত সংস্থা হচ্ছে UNESCO। জাতিসংঘ সনদে বিশ্ববাসীর সাংস্কৃতিক জীবনের সামগ্রিক উন্নয়ন ও বিকাশের সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ঘোষণা বাস্তবায়নে মানবজাতির শিক্ষা, বিকাশ এ সংস্থার জন্ম জাতিসমূহের মধ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতির সম্প্রসারণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বিনিময়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে UNESCO ব্যাপক অবদান রাখছে।
UNESCO এর পরিচয় : ১৯৪৫ সালে লন্ডনে আহত এক সম্মেলনে ২১ দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে UNESCO গঠনতন্ত্র প্রস্তুত হয়। ১৯৪৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৪৪ রাষ্ট্র কর্তৃক UNESCO -র সংবিধান গ্রহণ ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এর জন্ম হয়। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ECOSOC) অধীনে একটি বিশেষায়িত সংস্থা।
UNESCO-র সদর দপ্তর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত। এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩টি সমাজকর্ম অভিধানে বলা হয়েছে। “UNESCO is an agency of the United Nations established in 1945 with head quarters in paris. “
UNESCO এর লক্ষ উদ্দেশ্য : UNESCO প্রাথমিক ও মূল লক্ষ হচ্ছে জাতিসমূহের মধ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা আনয়ন । নিম্নে ইউনেস্কোর লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. শিক্ষা, বিজ্ঞান, ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে জাতিসমূহের সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষ সকল মানুষের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
৩. বিশ্বজুড়ে সকল গণমাধ্যমের ব্যবহারের মাধ্যমে পারস্পরিক জ্ঞান ও ধারণার আদান-প্রদান করা।
৪. জাতিসমূহের পারস্পরিক সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
৫. সদস্য দেশগুলোকে তাদের অনুরোধের ভিত্তিতে শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমের উন্নয়নের সহায়তা করা।
৬. আন্তর্জাতিক কনভেনশনের মাধ্যমে দেশসমূহের বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য বই, শিক্ষাকর্ম, বিজ্ঞান ও ইতিহাস নিদর্শন সংরক্ষণের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত জ্ঞানের বিকাশ সাধন।
৭. শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তি এবং এসব সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকাশনা, সাহিত্য ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন বস্তু ও অন্যান্য দ্রব্য ও তথ্যাদির আদান-প্রদানের মাধ্যমে দেশগুলো বুদ্ধিভিত্তিক উন্নয়নে তাদেরকে উৎসাহিত করা।
৮. শিশুদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষা পদ্ধতির জন্য সদস্য দেশগুলোকে প্রস্তাব প্রদান ।
৯. বিভিন্ন দেশের প্রকাশনায় অন্যান্য দেশগুলোকে অংশগ্রহণের সুযোগের মাধ্যমে জ্ঞান, বিকাশের প্রচার ও প্রসার সhধন।
UNESCO-র প্রশাসনিক কাঠামো : ইউনেস্কোর সাংগঠনিক বা প্রশাসনিক কাঠামো ৩টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত। নিম্নে এর সাংগঠনিক কাঠামো আলোচনা করা হলো ঃ
১. সাধারণ সম্মেলন : UNESCO -র সাধারণ সম্মেলন পরিচালনা সংস্থা নামেও পরিচিত। সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। প্রতিবছর একবার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি সদস্য রাষ্ট্র ৫জন প্রতিনিধি প্রেরণ করতে
পারে, তবে ভোট একটি। মূল কর্মসূচি নির্ধারণ প্রতিবেদন প্রস্তুতি, আলোচনা, কার্যনির্বাহী পর্ষদের সদস্য নির্বাচন ও মহাপরিচালক নিয়োগ এর প্রদান কাজ।
২. কার্যনির্বাহী পরিষদ : সাধারণ সম্মেলন কর্তৃক নির্বাচিত ২৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। এর সভা বছরে অন্তত দুবার অনুষ্ঠিত হয়। পর্ষদের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে সাধারণ সম্মেলনের প্রস্তাব কার্যকরীকরণ, বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান, মহাপরিচালক নিয়োগ, মহাপরিচালকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ, নতুন সদস্যদের গ্রহণ সুপারিশ পেশ প্রভৃতি।
৩. সচিবালয় ঃ মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়ে এটি গঠিত, যা কার্যনিবাহী পর্ষদের ও সংস্থার কাজকর্ম পরিচালনা করে। এছাড়া আরোও রয়েছে। যেমন-
৪. জাতীয় কমিশন ঃ ইউনেস্কোর সাথে সংযোগ রক্ষা ও লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের প্রতি সদস্য দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধির সমন্বয়ে তাদের জাতীয় কমিশন গঠিত হয়। যেমন- বাংলাদেশে ইউনেস্কো কমিশন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইউনেস্কো জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে সারা বিশ্বে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বিশেষ অবদান রয়েছে। এ সকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য এর রয়েছে
নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আর এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো। প্রশাসনিক কাঠামোর গভীর তত্ত্বাবধানে ইউনেস্কো বিশ্বব্যাপী তাদের অবদানের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে।