উত্তর ঃ- ভূমিকা ঃ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সকলের স্বাস্থ্য রক্ষা অপরিহার্য এবং তা অর্জন ব্যক্তি ও রাষ্ট্রসমূহের সর্বোচ্চ সহযোগিতার উপর নির্ভর করে। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বা World health Organization । বিশ্বজুড়ে জাতিসমূহের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের মাধ্যমে সর্বোত্তম স্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
→ World Health Organization (WHO) এর পরিচয় ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্ষিপ্ত নাম WHO। -এর পূর্ণরূপ World Health Organization এটি জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্ভাব্য সকল উপায়ে সকল মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন সাধন করা। WHO -এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৯৪। ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী বোর্ডের মাধ্যমে এ সংস্থাটি পরিচালিত হয়। এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত।
সমাজকর্ম অভিধানের মতে, “WHO is the UN agency established in its present from in 1948, with head quarters in Geneva.”
→ WHO -এর লক্ষ্য ঃ রোগমুক্ত বিশ্বগঠন এবং প্রত্যেক বিশ্ব নাগরিকের জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম স্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ উন্নতি সাধন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ শ্রেণি নির্বিশেষে
সকলের সর্বোত্তম স্বাস্থ্য সুনিশ্চিতকরণ।
→ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO -এর সাংগঠনিক সম্পাদক ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামো নিম্নরূপ-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO এর কার্যক্রম ঃ ১৯৭৭ সালের সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাথমিক স্বাস্থ্য বিধির ভিত্তিতে “সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য” কর্মসূচি সম্বলিত গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করেছে। নিম্নে WHO এর কার্যক্রমসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
১. সংক্রামক ব্যাধি নির্মূল ঃ WHO সংক্রামক রোগসমূহ- কলেরা, ম্যালেরিয়া, বসন্ত, কুষ্ঠরোগ, যক্ষ্মা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এজন্য বিভিন্ন কারিগরি, আর্থিক, বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়।
২. স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণ : WHO স্বাস্থ্য উন্নয়নে সেবার মানোন্নয়ন, সেবা সামগ্রী বিতরণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, টিকাদান, ওষুধ ও চিকিৎসা কৌশল উদ্ভাবন এবং বিতরণ প্রভৃতির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবার বিস্তার ঘটায়।
৩. স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ঃ সুস্বাস্থ্য অর্জন ও সংরক্ষণে WHO সচেতনতা সৃষ্টি করে। রোগ ব্যাধির লক্ষণ, কারণ প্রভাব. প্রতিকার সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ ও প্রচার স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবেশ উন্নয়ন প্রভৃতির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করে।
৪. মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মা ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়ন চিকিৎসা, ওষুধ বিতরণ পরামর্শ প্রদান, মাতৃসদন ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন, ধাত্রী প্রশিক্ষণ, পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য সরবরাহ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
৫. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক শিক্ষার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহায়তা দেয়। চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও উন্নয়ন, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও বৃত্তি প্রদান, বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসক, নার্স, শিক্ষক ও সমাজকর্মী প্রেরণ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থা নেয়।
৬. স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সদস্য দেশের সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করে। জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি সাহায্য করে থাকে।
৭. গবেষণা ঃ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করে। এজন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে WHO স্বাস্থ্য বিষয়ক সংক্রান্ত, বৈজ্ঞানিক তথ্যের ক্লিয়ারিং হাউজ হিসেবে কাজ করে।
৮. মহামারী প্রতিরোধ ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দুর্যোগ ও মহামারী প্রতিরোধ কল্পে সতর্কতা সেবা প্রদান করে এবং স্থল, জল ও আকাশ মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের উপর স্বাস্থ্য নির্দেশিকার সুপারিশ পেশ করে।
৯. স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান, প্রচারণা, আলোচনা সভা, সম্মেলন, প্রকাশনা প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
১০. স্বাস্থ্য অবকাঠামো গঠন ৪ স্বাস্থ্যগত অবকাঠামো নির্মাণে WHO সরকারকে সহায়তা করে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসালয় স্থাপন, হাসপাতাল নির্মাণ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গঠন, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক স্থানীয় ও সমষ্টিগত স্বাস্থ্য উদ্যোগ গ্রহণ এর অন্যতম কার্যক্রম।
১১. স্বাস্থমান রক্ষা ঃ WHO আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যমান বজায় রাখতে সচেষ্ট। ওষুধ, প্রতিষেধক টিকা, ইনজেকশন, ইত্যাদির মান সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদানে সংস্থা বদ্ধপরিকর.
১২. শিশুরোগ প্রতিরোধ ঃ জন্মের পর থেকে শৈশবকালীন শিশুর ৬ মারাত্মক রোগ প্রতিরোধকল্পে স্বাস্থ্য সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। যেমন- পোলিও, হাম, ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, যক্ষ্মা ও হুপিংকাশি ইত্যাদি ।
১৩. মানসিক স্বাস্থ্য ঃ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, তথ্য সংগ্রহ, শিক্ষা প্রদান, পেশাদার ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যাপারে WHO তৎপর। ১৯৪৮ সালে WHO-র সমর্থনের “World Federation For Mental Health” নামক সংস্থা গঠিত হয়।
১৪. এইডস প্রতিরোধ ঃ মরণব্যাধি এইডস প্রতিরোধকল্পে WHO ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যান্য সংস্থার সাথে WHO এইডস প্রতিরোধে যৌথভাবে কাজ করে।
১৫. যৌথ কার্যক্রম ঃ WHO স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয় মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, যুবকদের সুসংগঠিতকরণ, আন্ত র্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়সমূহ পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে UNICEF, ILO, UNESCO প্রভৃতি সংস্থার সাথে সমন্বয়ধর্মী ও যৌথ কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে।
১৬. অন্যান্য কার্যক্রম ঃ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এছাড়া আরো অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যথা-
(ক) পুষ্টি কর্মসূচি ও অপুষ্টিজনিত রোগ প্রতিরোধ;
(খ) পর্যান্ত খাদ্য ও খাদ্য উপাদান সরবরাহ;
(গ) পরিবেশ উন্নয়ন;
(ঘ) পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ;
(ঙ) দুর্ঘটনা প্রতিরোধ;
(চ) স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নায্যতা প্রতিষ্ঠার সামর্থ্য তৈরি;
(ছ) মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাবার সমান সুযোগ প্রদান প্রভৃতি।
উপসংহার ঃ পরিেেশষে বলা যায় যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা। বিশ্বব্যাপী সমস্যা মোকাবিলা, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের মাধ্যমে সর্বোত্তম স্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কল্যাণে বিশ্বব্যাপী অনেক জটিল ও নিরাময়যোগ্য ব্যাধি প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে। তাই বিশ্বব্যাপী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কার্যক্রম আরও প্রসারিত করা উচিত।