অথবা, কী কী উপায়ে প্রবীণদের সমস্যা সমাধান করা যায়।
অথবা, বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে প্রবীণদের সমস্যা সমাধানের উপায়গুলো কী কী?
অথবা, বাংলাদেশের প্রবীণদের সমস্যা সমাধানের পন্থা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষের জীবনের চূড়ান্ত স্তর বা পর্যায় হল প্রবীণ/বার্ধক্য। আজকের দিনে যে নবীন আগামী দিনে সে প্রবীণ বা বার্ধক্যে উপনীত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি (দৈনিক ইত্তেফাক, মে ২০০৬)। এদেশে প্রবীণরা মূলত পরিবারের সাথেই বসবাস করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শহরাঞ্চলে প্রবীণদের জন্য কিছু প্রবীণ নিবাস গড়ে তোলা হয়েছে। দারিদ্র্যপীড়িত এদেশের মানুষের একে তো সমস্যার শেষ নেই সেক্ষেত্রে সমাজে প্রবীণদের সমস্যা তুলনামূলকভাবে আরও বেশি। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রবীণদের সমস্যাগুলোকে কখনই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। ফলে দেখা যায় সময়ের পরিবর্তনে প্রবীণদের সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রবীণদের সমস্যা সমাধানের উপায় : আমাদের দেশে প্রবীণদের মাঝে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন থেকে বিরাজমান। উক্ত সমস্যার গভীরতা ও ব্যাপকতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তবে উক্ত সমস্যাগুলো মোকাবিলার বা সমাধান করার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে :
১. পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করা : আমাদের দেশের প্রবীণদের মাঝে পুষ্টির দারুণ অভাব বিদ্যমান। এদের অধিকাংশই অপুষ্টিজনিত নানা রোগে শোকে আক্রান্ত। বিশেষ করে গ্রামীণ এবং দরিদ্র প্রবীণদের জন্য এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তাই দেশের প্রবীণদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। এতে দেশের সার্বিক জনসাধারণের পুষ্টি গ্রহণের হার বা মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।
২. উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান : আমাদের দেশের প্রবীণদের জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য তাদেরকে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মাসে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ করা যেতে পারে । ফলে তারা বার্ধক্যজনিত নানাবিধ রোগ থেকে মুক্তি পাবে এবং এগুলো প্রতিরোধে সক্ষম হবে।
৩. সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ : আমাদের প্রবীণ সম্প্রদায়কে নিরাপত্তাহীনতার হাত থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য বয়স্ক ভাতা, পেনশন, সামাজিক সাহায্য হিসেবে এককালীন অনুদান, রিলিফ ইত্যাদি কর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। উক্ত কর্মসূচি প্রবর্তন করা হলে
দেশের প্রবীণ সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতাজনিত উদ্বিগ্নতা এবং ভীতি থেকে মুক্তি লাভে সক্ষম হবে।
৪. কর্মের সুযোগ : প্রবীণদের হাতে সাধারণত অনেক অলস সময় পড়ে থাকে। তারা ব্যক্তিগতভাবে অলস সময় কাটাতে অপছন্দ করেন। তাই তাদেরকে তাদের যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া যেতে
পারে। এজন্য তাদেরকে বিভিন্ন সৌখিন কাজ যেমন- মালা তৈরি করা, উলের কাপড় বুনন, জাল বুনন, সেলাইয়ের মাধ্যমে কাপড়ে নকশা প্রস্তুতকরণ ইত্যাদিতে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
৫. চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা : প্রবীণদের জন্য চিত্তবিনোদনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এর ফলে তারা মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভে সক্ষম হন। আমাদের দেশে প্রবীণদের চিত্তবিনোদনের জন্য পরিবার ও সমাজের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এছাড়া প্রবীণদের বিভিন্ন ধরনের সৌখিন খেলাধুলা যেমন- লুডু, তাস, দাবা ইত্যাদি ছাড়াও তাদেরকে রেডিও শোনা, টিভি দেখা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে চিত্তবিনোদনে সহায়তা করা সম্ভব।
৬. নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব দূরীকরণ : এদেশের কেন, সকল দেশের প্রবীণরাই একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতাজনিত সমস্যার সম্মুখীন। তাই প্রবীণদের জন্য একাকীত্বের অনুভূতি দূর করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য তাদেরকে অন্যান্য প্রবীণদের সাথে আন্তঃক্রিয়ার সুযোগ দিতে হবে, পরিবারের সদস্যদেরকে প্রবীণদের জন্য সময় দিতে হবে। কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে এবং এভাবেই তাদের নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্বের অনুভূতি হ্রাসকরণ সম্ভব।
৭. স্বাস্থ্যকর আবাসিক সুবিধা প্রদান : আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০% স্বাস্থ্যসম্মত আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত ৷ সেক্ষেত্রে প্রবীণদের অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই আরও খারাপ। তাই প্রবীণদের উন্নতমানের আবাসিক সুবিধা
নিশ্চিতকরণ সম্ভব না হলে তাদের জন্য যতদূর সম্ভব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি গৃহ পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। এতে তারা বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগজীবাণুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হবে। প্রবীণদের জন্য সরকারিভাবে বৃদ্ধ বা প্রবীণ নিবাস গড়ে তোলা যেতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আমাদের দেশে প্রবীণদের মাঝে বহুবিধ সমস্যা বিদ্যমান। যদিও এ সমস্যা সম্পর্কে আমাদের দেশে পূর্বে তেমন কোন চিন্তাভাবনা ছিল না, যার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালের আগে এদেশে জাতীয় পরিকল্পনায় কোথাও প্রবীণ বা বার্ধক্য শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি।