অথবা, মৌল মানবিক চাহিদার সংজ্ঞা দাও।নাগরিকদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা কাকে বলে? তোমার মতে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা প্রত্যয়টি ব্যাখ্যা কর। মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের অবদান বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সামাজিক জীব। আর জীব মাত্রই জীবনধারণের জন্য কিছু কিছু জিনিসের প্রয়োজন।কিন্তু মানুষ সামাজিক জীব বলে মানুষকে জীবনধারণের পাশাপাশি সামাজিকতা রক্ষা করতে হয়। তাই জীবনধারণ ও
সামাজিকতা রক্ষার জন্য মানুষের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চাহিদাকেই মৌল মানবিক চাহিদা বলে। এসব চাহিদা পূরণ ছাড়া মানুষ বাঁচতে ও সামাজিকতা রক্ষা করতে পারে না। অন্যদিকে, রাষ্ট্র বৃহৎ সংগঠন। বর্তমানকালে রাষ্ট্র মানুষের প্রায় সব ধরনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাই মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম।
মৌল মানবিক চাহিদা : মানুষের জীবনধারণ ও সামাজিকতা রক্ষার জন্য যেসব প্রয়োজন পূরণ করা অত্যাবশ্যক তাকে মৌল মানবিক চাহিদা বলে। এ চাহিদাগুলো এতটাই প্রয়োজনীয় যে, এগুলোর অভাবে মানুষ বাঁচতে পারে না। যেমন- খাদ্যের অভাবে মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : মৌল মানবিক চাহিদা সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হল :
অধ্যাপক ড. মোঃ নূরুল ইসলাম মৌল মানবিক চাহিদা সম্পর্কে বলেছেন, “Which needs are essential for human life are call Basic human need.” অর্থাৎ, মানুষের জন্য যেসব জিনিস অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তাকে মৌল
মানবিক চাহিদা বলে।
ডেভিড জেরী ও জুলিয়া জেরী কলিঙ্গ সমাজবিজ্ঞান অভিধান সম্পাদনা করেন। উক্ত অভিধানে তাঁরা বলেছেন, “Basic human needs the conception that all human beings sure fundamental needs by virtue of their humanity. The fulfillment of these full participation in social life.”
উপরের আলোচনা থেকে একথা বলা যায় যে, মৌল মানবিক চাহিদা হল সেসব প্রয়োজনের সমষ্টি যা মানুষের জীবনধারণ ও সামাজিকতা রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক। এগুলো পূরণ না হলে মানুষ বাঁচতে পারে না ও সামাজিকতা রক্ষা
করতে পারে না।
মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের ভূমিকা : বর্তমানকালে রাষ্ট্র মানুষের প্রায় সব ধরনের চাহিদা পূরণ করে থাকে। তাছাড়া রাষ্ট্র নাগরিক সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। তাই মৌল মানবিক চাহিদা।
পূরণেও রাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাপক। নিম্নে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা করা হল :
১. নীতি নির্ধারণ : যে কোন কাজ করতে গেলে আগে প্রয়োজন উপযুক্ত নীতি নির্ধারণ।আর রাষ্ট্রীয় সব কাজ নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে হয়ে থাকে।তাই নাগরিকদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন প্রভৃতি চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করতে পারে রাষ্ট্র। যাতে জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা সহজে পূরণ হয়।
২. পরিকল্পনা প্রণয়ন : রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারে।কারণ পরিকল্পনা ছাড়া কোন কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় না। তাই নাগরিকদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও শিক্ষার চাহিদা।সঠিকভাবে পূরণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারে রাষ্ট্র।
৩. কর্মসূচি গ্রহণ : রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন।করে।শুধু নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করলেই হবে না, নীতি ও পরিকল্পনার আলোকে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।নীতি ও
পরিকল্পনা মাফিক বাস্তবসম্মত কর্মসূচি প্রণয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে।
৪. কর্মসূচি বাস্তবায়ন : রাষ্ট্র, নাগরিকদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন,কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এর পর গৃহীত কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলেই জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হবে। সেজন্য রাষ্ট্রীয় সম্পদ কাজে লাগাতে হবে।
৫. কর্মসংস্থান সৃষ্টি : রাষ্ট্র নাগরিকদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে। কারণ দেশে যদি বেকারত্বের হার বেড়ে যায় তাহলে মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হবে না। তাই নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন
করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে রাষ্ট্র।
৬. সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা : রাষ্ট্র সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দুর্যোগ কবলিত লোকদের জন্য মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করতে পারে। যেমন- বয়স্ক ভাতা দান, বিধবা ভাতা প্রদান, বন্যা দুর্গতদের জন্য রিলিফ, শীতার্তদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি। ফলে অসহায় মানুষ তাদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করে থাকে।
৭. সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার : কোন রাষ্ট্র তার প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ফলে জনগণের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। যার ফলে মৌল মানবিক চাহিদা সহজে পূরণ হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সর্বোচ্চ কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রাখে। সেজন্য জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ জনগণের প্রধান চাওয়া, তাই রাষ্ট্র এটি পূরণে সচেষ্ট থাকে। উপরিউক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে।