অথবা, ধর্ম মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সহায়ক কি না আলোচনা কর।
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ধর্মের অবদান বর্ণনা কর।
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ধর্মের অবদান কী কী?
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ধর্মের ভূমিকা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ তার জীবনধারণ, বংশবৃদ্ধি, অস্তিত্ব ও সামাজিকতা রক্ষার জন্য কতিপয় চাহিদা পূরণ করে থাকে। এসব চাহিদা ব্যতিরেকে মানুষ সমাজে সভ্য মানুষ হিসেবে বাঁচতে পারে না। মানুষের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এ ধরনের চাহিদাসমূহকে মৌল মানবিক চাহিদা বলা হয়। অন্যদিকে, ধর্ম হল মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি বিষয়। ধর্ম মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সেজন্য কোন মানুষ ধর্মের বাইরে যেতে চায় না। যেহেতু ধর্ম মানুষের জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করে সেহেতু ধর্ম মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
মৌল মানবিক চাহিদার উপর ধর্মের প্রভাব : ধর্ম মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই মৌল মানবিক চাহিদার উপর ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে মৌল মানবিক চাহিদার উপর ধর্মের প্রভাব আলোচনা করা হল :
১. শিক্ষাদানে উৎসাহ দেয় : ধর্ম মানুষকে শিক্ষাগ্রহণ ও শিক্ষাদানে উৎসাহী করে তোলে। শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক প্রয়োজন। শিক্ষার মত মৌল মানবিক প্রয়োজন পূরণে ধর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।প্রত্যেক ধর্মেই জ্ঞানকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, তোমরা যা জানো তা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দাও। ইসলাম ধর্মে আরও বলা হয়েছে, “জ্ঞানচর্চার জন্য প্রয়োজনে সুদুর চীন দেশে যাও।”
২. জীবিকা অর্জনের তাগিদ : ধর্ম মানুষের সামগ্রিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। জীবিকা অর্জনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে ধর্মে। যেমন- ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, “আযান হলে মসজিদে যাও, আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর হালাল রুজির সন্ধান কর।” তাই একথা বলা যায় যে, ধর্ম মানুষকে হালাল জীবিকা অর্জনের তাগিদ দেয়। এর মাধ্যমে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের তাগিদ দেয়।
৩. সমতা বিধানের ক্ষেত্রে : ধর্ম মানুষকে সমতা বিধানে সহায়তা করে থাকে। ধর্ম মনে করে সমাজে ধনী-গরিব,উঁচু-নিচু বলে কিছু নেই।ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সব মানুষই সমান।
৪. স্বনির্ভরতার তাগিদ : ধর্ম মানুষকে পরনির্ভর হতে নিষেধ ও স্বনির্ভর হতে উৎসাহ দান করে। কেবল ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।অন্যদিকে, প্রয়োজনে কাঠ কেটে খেতে বলা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, ধর্ম মানুষকে স্বনির্ভর
হতে অনুপ্রেরণা যোগায়।স্বনির্ভর হলে মানুষের মৌল মানবিক চাহিদাগুলো সহজেই পূরণ হয়।
৫. কর্মমুখী করে তোলে : ধর্ম মানুষকে অলসতা পরিহার করে কর্মমুখী হতে উৎসাহ দেয়। কারণ অলসতা ধর্ম পছন্দ করে না। সেজন্যই ইসলামে বলা হয়েছে নামাজের সময় হলে নামাজ পড় এবং বাকি সময় হালাল রুজির অনুসন্ধান কর।কর্মমুখী হলে মানুষের মৌল মানবিক চাহিদাগুলো সহজেই পূরণ হয়।
৬. চিত্তবিনোদন : ধর্ম মানুষকে চিত্তবিনোদনে উৎসাহ দান ও নির্দেশ দান করে। চিত্তবিনোদন মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা। চিত্তবিনোদনের চাহিদা মেটাতে ইসলাম ধর্মে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।যেমন— ঈদ, সীরাতুন্নবী ইত্যাদি। এছাড়াও দৈনন্দিন ধর্মীয় কাজ করলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। অন্যান্য ধর্মেও বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মানুষের কল্যাণের জন্যই ধর্মের আবির্ভাব। ধর্ম মানুষের সামগ্রিক জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের উপরও ধর্মের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ধর্মীয় প্রভাব সহায়ক ভূমিকা পালন করে একথা আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি।