অথবা, বাংলাদেশে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সরকারি পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর ।
অথবা, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে কর্মসূচিসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, কী কী কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মানুষ মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। সেজন্য সরকার নানারকম কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে জনগণকে সহায়তা করে যাচ্ছে। নিম্নে বাংলাদেশের মানুষের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ আলোচনা করা হল :
১. খাদ্য : খাদ্য মানুষের প্রথম ও প্রধান মৌল মানবিক প্রয়োজন। বাংলাদেশে ১৪ কোটি জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সরকার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ক. রিলিফ,
খ. খাদ্য সাহায্য,
গ. কাজের বিনিময়ে খাদ্য,
ঘ. খোলা বাজারে চাল বিক্রি,
ঙ. রেশনিং ইত্যাদি।
২. বজ্র : খাদ্যের পরেই মৌল মানবিক চাহিদা হিসেবে বস্ত্রের স্থান। বাংলাদেশ বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ১৯৯৩ সালে বস্ত্রনীতি ঘোষণা করে। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মাথাপিছু বস্ত্র ৯ মিটার থেকে ১১ মিটার করা হয় এবং কাপড়ের উৎপাদন ৭৭.১০ কোটি মিটার থেকে ১২১.৫ কোটি মিটারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে বাংলাদেশে কাঁচামালের অভাব ও প্রযুক্তির অভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় নি। ফলে প্রতিবছর বিপুল ব্যয়ে বস্ত্র আমদানি করে জনগণের চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
৩. বাসস্থান : বাসস্থান মানুষের অন্যতম মৌল মানবিক প্রয়োজন। প্রতিবছর বাংলাদেশে ২২ লক্ষ নতুন লোক যোগ হয়। ২২ লক্ষ লোকের জন্য প্রায় ৭.৫০ লক্ষ বাসগৃহের প্রয়োজন হয়। তবে সবার জন্য বাসগৃহের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না বলে বস্তি সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার বাসগৃহ সমস্যা সমাধানের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান করে। এছাড়াও দরিদ্র ও ভূমিহীনদের জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
৪. শিক্ষা : শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার ও অন্যতম মৌল মানবিক চাহিদা। বাংলাদেশ সরকার এদেশের মানুষের শিক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ২০০৫-২০০৬ সালের বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া
হয়। বিনামূল্যে বই বিতরণ, প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলককরণ, সবার জন্য শিক্ষা কর্মসূচি, মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও মেয়েদের উপবৃত্তি প্রদান সরকারের সদিচ্ছার প্রমাণ। ২০০৬ সালের মধ্যে নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
৫. চিকিৎসা : চিকিৎসা মানুষের মৌল মানবিক প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকার জনগণের চিকিৎসার জন্য বাজেটে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ দেয়। সরকার সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সাল নাগাদ সবার জন্য স্বাস্থ্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। স্বাস্থ্যসেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌছে দেওয়ার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে।
৬. চিত্তবিনোদন : চিত্তবিনোদন অন্যতম মৌল মানবিক প্রয়োজন। সরকার জনগণের চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করেছে। শহর অঞ্চলে পার্ক ও উদ্যান প্রতিষ্ঠা তার প্রমাণ। গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন মেলা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের
আয়োজনই তার প্রমাণ । এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন জনগণকে বিনোদন দিতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন টিভি চ্যানেল প্রকাশের অনুমতি দিচ্ছে সরকার। যাতে করে মানুষ চিত্তবিনোদনের সুযোগ আরও বেশিমাত্রায় ভোগ করতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, মৌল মানবিক চাহিদা মানুষের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। এটা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই যে কোন উপায়ে মানুষ মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে চায়।বাংলাদেশ সরকার মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের জন্য অত্যন্ত সচেতন। দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে মৌল মানবিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারে সেজন্য সরকার নানা রকম কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তাই একথা বলা যায় যে, মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার অন্ত নেই।