অথবা, প্রবীণদের বিভিন্ন রকম চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে প্রবীণদের চাহিদাগুলো কী হতে পারে?
অথবা, আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে প্রবীণদের চাহিদাগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সমাজে জন্মগ্রহণ করে এবং সমাজেই বড় হয়। জন্মগ্রহণ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ জীবনের বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে। এসব ধাপে মানুষের নানারকম প্রয়োজন পূরণ করতে হয়। এসব প্রয়োজনকেই বলা হয় চাহিদা। যারা জীবনের অনেকগুলো সময় পার করে বৃদ্ধ হয়েছেন তাদেরকেই প্রবীণ বলা হয়। এ বয়সটা মানুষের জীবনের শেষ ধাপ। এসব প্রবীণ ব্যক্তিরা ঐ সময়ে নানারকম প্রয়োজন অনুভব করে। এসব প্রয়োজনসমূহ পূরণ করা প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব। কেননা তারা সমাজকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। তাই জীবনের শেষ সময়ে তাদের প্রয়োজন পূরণে সবাইকে সচেষ্ট হতে হয়।
বাংলাদেশে প্রবীণ ব্যক্তিদের চাহিদাসমূহ : পৃথিবীর প্রত্যেক দেশের মত বাংলাদেশেও অনেক প্রবীণ ব্যক্তি বসবাস করেন। এ সময় তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। তাছাড়া তাদের প্রয়োজনসমূহও হয় একটু ভিন্নরকম। নিম্নে বাংলাদেশের প্রবীণ ব্যক্তিদের চাহিদাসমূহ আলোচনা করা হল :
১. অর্থের চাহিদা : বাংলাদেশে প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রথম চাহিদা হল অর্থের চাহিদা। বৃদ্ধ বয়সে তার প্রয়োজন পূরণের জন্য কারও মুখাপেক্ষী যেন হতে না হয় সেজন্য প্রবীণদের অর্থ প্রয়োজন। এ অর্থের জন্য প্রবীণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। অথবা অন্য যে কোন উপায়ে সরকারি উৎস হতে প্রবীণদের অর্থের চাহিদা পূরণ করতে হবে।
২. বাসস্থানের চাহিদা : এর পরই প্রবীণদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের প্রয়োজন হয়। কেননা বৃদ্ধ বয়সে সুন্দরভাবে অবস্থানের জন্য চাই নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান। তাই বাংলাদেশে প্রবীণদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. কর্মসংস্থানের চাহিদা : আগেই বলা হয়েছে প্রবীণদের জন্য অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু ঐ বয়সে পরনির্ভরশীল হয়ে থাকা বেশ অপমানজনক। তাই প্রবীণদের উপযোগী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে যেখান থেকে তারা তাদের প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে পারে।
৪. স্বাস্থ্য চাহিদা : বৃদ্ধ বয়সে প্রবীণদের নানারকম শারীরিক সমস্যা হয়। এ বয়সে মানসিক অবস্থাও ভালো থাকে না। তাই প্রবীণদের স্বাস্থ্য চাহিদা খুব বেশি থাকে। সেজন্য প্রবীণদের জন্য ডাক্তার ওষুধপত্র ও হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সেবাযত্নের চাহিদা : বাংলাদেশে প্রবীণদের মারাত্মক সমস্যা হল বৃদ্ধ বয়সে তারা উপযুক্ত সেবাযত্ন পায় না।অথচ সেবাযত্নের চাহিদা তাদের ব্যাপক। কেননা বৃদ্ধ বয়সে প্রবীণদের নানারকম রোগ শোক লেগেই থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য উপযুক্ত সেবাযত্ন নেওয়া হয় না।
৬. খাদ্যের চাহিদা : বাংলাদেশে প্রবীণদের খাদ্য চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। বৃদ্ধ বয়সে সব খাবার খেতে পারে না প্রবীণরা। তাই প্রবীণদের উপযোগী খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন তাদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. পানীয়ের চাহিদা : বৃদ্ধ বয়সে পানীয়ের চাহিদা থাকে। বাংলাদেশে বৃদ্ধদের জন্য উপযুক্ত ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও তাদের জন্য পুষ্টিকর ফলের রস ও ফলমূল সরবারাহ করতে হবে যাতে তারা শারীরিকভাবে ভেঙে না পড়েন।
৮. অবসর ভাঙা প্রাপ্তির চাহিদা : বাংলাদেশের যেসব প্রবীণ ব্যক্তিরা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তাদের জন্য অবসর ভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেন এ অর্থ দিয়ে তারা তাদের প্রয়োজনসমূহ পূরণ করতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি।ফলে বাংলাদেশে প্রবীণ ব্যক্তিদের সংখ্যাও অনেক বেশি। এসব প্রবীণ ব্যক্তিদের নানারকম চাহিদা বা প্রয়োজন রয়েছে।এসব প্রয়োজন বা চাহিদাসমূহ যথাযথভাবে পূরণ করা আমাদের একান্ত জরুরি। কেননা প্রবীণরা আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজেরই অংশ। তাই সরকারকেও এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।