বিভিন্ন ধরনের মানবিক চাহিদাগুলো আলোচনা কর।

অথবা, মানবিক চাহিদাগুলো কী কী আলোচনা কর।
অথবা, কী কী ধরনের মানবিক চাহিদা রয়েছে আলোচনা কর।
অথবা, মানুষের প্রয়োজনীয় মানবিক চাহিদাসমূহ লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে। মানুষকে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে কিছু বিষয় অবশ্যই প্রয়োজনীয় হিসেবে দেখা দেয়। অর্থাৎ মানবজীবনের কিছু অত্যাবশ্যকীয় ব্যাপার রয়েছে। এগুলো পূর করতে না পারলে মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে পারে না। এ ধরনের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়কে প্রয়োজন বা চাহিদা হিসেবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে। যেমন- সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের সামাজিক চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে, মানুষে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয় বলে তার কিছু অর্থনৈতিক চাহিদা থাকতে পারে। সুতরাং চাহিদা হল মানবজীবন ধারণ ও অস্তিত্ব রক্ষার অত্যাবশ্যকীয় বিষয়াবলি। চাহিদা বিভিন্ন পর্যায়ের হতে পারে। আবার সমরে পরিবর্তনের সাথে চাহিদারও পরিবর্তন হতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের মানবিক চাহিদা : মানুষের মানবিক চাহিদাসমূহ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। নিম্নে এ চাহিদাগুলো আলোচনা করা হল :
১. দৈহিক চাহিদা (Physical Needs) : মানবজীবনের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হল দৈহিক চাহিদা। বেঁচে থাকার জন্য দৈহিক চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। দৈহিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে মানুষ সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে
না। তাই মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা ও বেঁচে থাকার জন্য দৈহিক চাহিদা পূরণ করা আবশ্যক। দৈহিক চাহিদার মধ্যে যেগুলো রয়েছে তা হল :
ক. খাদ্য : খাদ্য দৈহিক চাহিদার মধ্যে প্রধান। খাদ্য ছাড়া মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। মানুষকে খাদ্যগ্রহণ করতে হয়। খাদ্যের চাহিদা মানুষ যে কোন উপায়ে পূরণ করে থাকে।
খ. পানীয় : খাদ্যের পরেই পানীয়ের স্থান। শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই হবে না তৃষ্ণা মিটানোর জন্য চাই পানি। পানি ছাড়াও মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই পানির অপর নাম জীবন।
গ. যৌন চাহিদা : দৈহিক চাহিদার মধ্যে যৌন চাহিদা অন্যতম। বয়োঃপ্রাপ্ত হলে মানুষ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এছাড়াও বংশবিস্তারের জন্যও যৌন চাহিদা মানুষকে পূরণ করতে হয়।
২. সামাজিক চাহিদা (Social Needs) : মানুষের অন্যতম চাহিদা হল সামাজিক চাহিদা। মানুষের জন্য সামাজিক চাহিদাও গুরুত্বপূর্ণ । কেননা মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে তাকে মিলেমিশে বসবাস করতে হয়।সামাজিক চাহিদা হল সমাজে সবাই মিলেমিশে বাস করার ফলে যেসব চাহিদার সৃষ্টি হয়; যেমন- সামাজিক নিরাপত্তা,সামাজিক স্বীকৃতি, ভালোবাসা, স্নেহ মমতা, ইত্যাদি। কারণ মানুষ একা বাস করতে পারে না। সমাজে সবাই মিলেমিশে বসবাস করে। কেউ বিপদে পড়লে অন্যরা তার বিপদে এগিয়ে আসে। এভাবে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া পাশাপাশি বসবাস করার ফলে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।
৩. অর্থনৈতিক চাহিদা (Economical Needs) :: দৈহিক ও সামাজিক চাহিদার পরেই মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদার স্থান। কারণ সমাজে বসবাস ও জীবনধারণ করতে হলে মানুষকে নানারকমের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়। এসব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য চাই পর্যাপ্ত অর্থ। এসব অর্থের যোগান দিতে মানুষকে নানা ধরনের যুক্তি দেখাতে হয়। বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে মানুষ অর্থ উপার্জন করে। এ উপার্জিত অর্থ দিয়েই মানুষ তার অন্যান্য প্রয়োজনসমূহ পূরণ করে থাকে। অর্থ ছাড়া অন্যান্য চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। তাই অর্থনৈতিক চাহিদা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা (Psychological Needs) : মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা মানবজীবনের অন্যতম চাহিদা। কারণ দৈহিক চাহিদা যেমন আছে তেমনি আছে মানসিক চাহিদা।এসব চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ না হলে মানুষ ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। মানসিক চাহিদার মধ্যে আবেগ, স্নেহ মমতা, ভালোবাসা ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি ও
মানসিক চাহিদার অন্তর্গত। মানসিক চাহিদাকে বর্তমানে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৫. সাংস্কৃতিক চাহিদা (Cultural Needs) : মানুষ যা করে তাই তার সংস্কৃতি। অন্যকথায় বলা যায় যে, মানুষের আচার ব্যবহার, কথাবার্তা, চালচলন, ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে সংস্কৃতি গঠিত। সুতরাং সাংস্কৃতিক চাহিদা বলতে এসব আচার ব্যবহার, ভাষা, শিক্ষা সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে বুঝানো হয়ে থাকে। মানুষের জন্য এসব চাহিদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- ভাষা না থাকলে মানুষ তার ভাবের আদান প্রদান করতে পারবে না। অন্যদিকে, সাহিত্য না থাকলে তার মনের বিকাশ সাধিত হবে না। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান না থাকলে মানুষ ধর্মহীন হয়ে পড়বে। সুতরাং মানবজীবনে সাংস্কৃতিক চাহিদার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, মানুষ তার জীবনধারণ ও পরিপূর্ণভাবে জীবন বিকাশের জন্য কিছু কিছু অভাব বোধ করে বা কিছু কিছু জিনিসের দরকার হয়। এসব উপাদানই হল মৌল চাহিদা। এ চাহিদা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এ চাহিদাগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে পারলে মানবজীবন সঠিকভাবে বিকশিত হয়। অন্যথায় মাবনজীবন স্থবির ও স্তিমিত হয়ে পড়ে।