অথবা, সমস্যার উৎসগুলো কী কী?
অথবা, সমস্যা সৃষ্টির মূল উৎসগুলো কী কী?
অথবা, সমস্যার কী কী উৎস রয়েছে?
অথবা, সমস্যার উৎসগুলো সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর।। ভূমিকা : সমস্যাকে কেন্দ্র করেই বিজ্ঞানের জিজ্ঞাসা ও গবেষণা শুরু হয়। তাই সমস্যাকে বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। সমস্যা ছাড়া সমাধানের যেমন কোন অর্থ হয় না। তেমনি সমস্যা ছাড়া বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ও কোন অর্থ হয় না। যে কোন গবেষণা করার জন্য প্রথমেই সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে হবে। সমস্যাটিকে চিহ্নিত করতে না পারলে তা সমাধান করাও সম্ভব হয় না। তাই সমস্যা নির্বাচন, সমস্যা সংজ্ঞায়ন ও সমস্যা ব্যাখ্যাকরণ ও সমস্যা নিয়ে কাজ গবেষকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুতরাং সার্থকভাবে গবেষণা পরিচালনা করার জন্য সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমস্যার উৎস : গবেষণামূলক সমস্যা সৃষ্টির উৎসসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. পূর্ববর্তী গবেষণা : পূর্ববর্তী গবেষণা সমস্যার একটি উৎস। যখন একটি গবেষণা শুরু করে তার কার্যসম্পাদন করা হয় তখন গবেষণার ফলাফলকে ঘিরে একাধিক গবেষণার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এসব সম্ভাবনাগুলো সমস্যাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে। এমনিভাবে একটি গবেষণা শেষ করার পর পর্যায়ক্রমে আরো একাধিক গবেষণামূলক সমস্যার উৎপত্তি ঘটে। এসব সমস্যাগুলো পূর্ববর্তী গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।
২. সাহিত্য পর্যালোচনা : গবেষণায় সমস্যার জন্য সাহিত্য পর্যালোচনাও প্রয়োজন। গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য, সংবাদ, ইতিহাস, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করাকে সাহিত্য বলে। এ সমস্ত গবেষণামূলক সাহিত্য পড়ে ব্যাখ্যা, পর্যালোচনা, আলোচনা বিশ্লেষণ করা হয়। বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর নতুন নতুন গবেষণামূলক সমস্যার উদ্ভব ঘটে।তাই গবেষণা সমস্যার ক্ষেত্রে সাহিত্য পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. অন্তদর্শন : সমস্যার উৎসমূলে অন্তদর্শনেরও ভূমিকা রয়েছে। যে সমস্ত লোক গবেষণা কাজে নিয়োজিত থাকে তাদেরকে প্রথমে সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। গবেষকরা যে কোন ব্যস্ত থাকুক না কেন তাদের প্রত্যক্ষণে সবসময় গবেষণার বিষয়বস্তু জাগ্রত থাকে। ফলে যে কোন সময় গবেষণা সংক্রান্ত নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে। নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে বিধায় এই প্রক্রিয়াকে অন্তদর্শন বলে।
৪. প্রাকৃতিক ঘটনাবলি : সমস্যার অন্যতম একটি উৎসমূল হলো প্রাকৃতিক ঘটনাবলি যখন থেকে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করা হয়। তখন থেকে গবেষকদের চিন্তা চেতনার কতকগুলো প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটে। এই সমস্ত প্রশ্নগুলোই মনোবিজ্ঞানে গবেষণামূলক সমস্যা বলে অভিহিত হয়। উদাহারণস্বরূপ মেঘলা আকাশে বিদ্যুৎ চমকাবার সময় প্রচণ্ড শব্দ হয়। এখানে প্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করাই গবেষকদের নিকট সমস্যা বলে বিবেচিত হয়।
৫. যৌক্তিক চিন্তা : মানুষ সবসময় যে কোন ব্যাপারেই হোক যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করতে চায়। সাধারণ মানুষের তুলনায় গবেষকদের মধ্যে এই সমস্ত চিন্তা চেতনা বেশি থাকে। ব্যক্তি যখন যুক্তির সাহায্যে বস্তুজগতের ঘটনাবলিকে বিশ্লেষণ করতে চান তখন ঘটনাবলির মধ্যে বিভিন্ন রকমের অসঙ্গতি লক্ষ করা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গবেষণামূলক সমস্যাগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে উদ্ভব হয়। গবেষকগণ তার নিজের মতো করে সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করে গবেষণার কাজে ব্যবহার করেন। সমস্যা ব্যতীত কোন গবেষণার কথা ভাবাই যায় না। সমস্যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই গবেষণার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সমস্যা।সমস্যার উৎস বিভিন্নভাবে হতে পারে। সুতরাং সমস্যার উৎসের গুরুত্ব গবেষণার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।


