পরীক্ষণের ধরনগুলো লিখ।

অথবা, পরীক্ষণের ধরনগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, পরীক্ষণের ধরনগুলো কী কী?
অথবা, পরীক্ষণের ধরনগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷। ভূমিকা : প্রত্যেক বিজ্ঞানেই নিজস্ব বিষয়বস্তুর আঙ্গিকে তার অনুধ্যান বা গবেষণা পদ্ধতি নির্ভর করে।মনোবিজ্ঞান মানুষের আচরণ নিয়ে কাজ করে এবং এ আচরণের ধরনে রয়েছে ব্যাপকতা। তাই মনোবিজ্ঞানে ব্যবহৃত পদ্ধতিসমূহেও রয়েছে ভিন্নতা ও ব্যাপকতা। এক্ষেত্রে কেবল একটি মাত্র পদ্ধতি ব্যবহার করে অনুধ্যান পরিচালনা সম্ভব নয়। এছাড়াও নতুন নতুন গবেষণা পদ্ধতির অনুসন্ধান ও তার প্রয়োগে মনোবিজ্ঞানীগণ সর্বদা সচেষ্ট।
পরীক্ষণের ধরন : মূলত চলকের পরীক্ষণের ক্ষেত্রে কোন ধরনের কৌশল ব্যবহার করা হবে এবং পরীক্ষণের প্রকৃতি ও নিয়ন্ত্রণের মাত্রার উপর পরীক্ষণ পদ্ধতির বিভিন্ন ধরন নির্ভর করে। Green Wood নিম্নোক্ত শ্রেণীর পরীক্ষণ পদ্ধতির
উল্লেখ করছেন :
ক. প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংশোধন: এটি পরীক্ষণের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায়ই অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে গবেষক কোন কাঠামোবদ্ধ গবেষণা বা অনুধ্যান পরিকল্পনা তৈরি না করে কেবল একটি অনুকল্প তৈরি করেন এবং সামাজিক বিভিন্ন শর্তে তা পরীক্ষা করার চেষ্টা করেন। যেহেতু তার অনুধ্যান পরিকল্পনা/কৌশল নির্দিষ্ট নয়, তাই অভিজ্ঞতার আলোকে তা পরিবর্তন করা হয়।
খ. নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণীয় অনুধ্যান: এখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এটিকে প্রায় ল্যাবরেটরি পরীক্ষণ বলা যায়। এ পদ্ধতিতে কোন উদ্দীপককে বিষয়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এর প্রেক্ষিতে বিষয়ের (Subject) প্রতি প্রভাবকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
গ. Ex-post-facto technique: এ পদ্ধতিটি সাধারণত সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ দু’টি ঘটনার মধ্যে বিভিন্ন প্রভাব কিভাবে ভিন্ন হয় তা জানার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ হিন্দি এবং ইংরেজি শিক্ষা ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কতটুকু প্রভাব বিস্তার করে তা জানার জন্য সমসংখ্যক দু’দল ছাত্র গ্রহণ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে দু’দলেরই অন্যান্য শর্ত যেমন- বয়স, অর্থনৈতিক অবস্থা, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিকে একই ধরনের ধরা হলো।
ঘ. প্রাকৃতিক পরীক্ষণ : এ ধরনের পরীক্ষণ ব্যাপক কৌশলকে অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন- প্রচারণার কৌশল, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পদ্ধতি, দলীয় সিদ্ধান্ত, দলীয় অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক প্রচারণার প্রভাব প্রভৃতি।
ঙ. গবেষণাগার পরীক্ষণ : এক্ষেত্রে গবেষক যা চান ঠিক সে ধরনের পরিবেশ বা অবস্থান তিনি তৈরি করেন এবং এক্ষেত্রে কিছু চলককে তিনি নিজের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করেন, আবার কিছুকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পরীক্ষণকে অনেক সময় ‘Controlled laboratory study হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। ‘নিয়ন্ত্রণ’ হচ্ছে পরীক্ষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিবেচ্য এবং এ নিয়ন্ত্রণ হতে হবে অবশ্যই পরিকল্পিতভাবে। তাই পরীক্ষণের ধরনগুলোর গুরুত্ব মনোবিজ্ঞানে অপরিহার্য।