অথবা, সমভারীকরণ ও প্রতিসমভারীকরণ কৌশল বলতে কী বুঝ?
অথবা, সমভারীকরণ ও প্রতিসমভারীকরণ কৌশল কাকে বলে?
অথবা, সমভারীকরণ ও প্রতিসমভারীকরণ কৌশল কী?
অথবা, সমভারীকরণ ও প্রতিসমভারীকরণ কৌশলের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরা ভূমিকা : চল একটি বৈজ্ঞানিক শব্দ, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Variable এবং বাংলা অর্থ হল চলনশীল বা পরিবর্তনশীল। =ারণ অর্থে চল বলতে এমন একটা বৈশিষ্ট্য বা গুণ বুঝায়, যা একই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। চল অর্থাৎ, চল মূল্যায়ন পরিবর্তনশীল। একটি পরীক্ষণে অনেকগুলো গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ হতে পারে। অতএব চল বলতে আমরা বুঝি যে কোন উপাদান, যা আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাহাই চল। চল পরীক্ষণের এমন একটা বৈশিষ্ট্য যা ফলাফলের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
সমভারীকরণ : বাহ্যিক চলকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি অন্যতম কৌশল হল সমভারীকরণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সব বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সমান সমান দু’টি দল গঠন করা হয়। একটি দলকে পরীক্ষণ দল ও অন্য দলকে নিয়ন্ত্রিত দল বলা হয়ে থাকে। পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দল সব শর্তের দিক থেকে সমান থাকবে। একটি দিক থেকে কেবল পার্থক্য থাকবে তা হল পরীক্ষণ দলে একটি পরীক্ষামূলক চল প্রয়োগ করা হবে, যা নিয়ন্ত্রিত দলে প্রয়োগ হবে না।
আবার অনেক সময় একটি সুনির্দিষ্ট ও সুপরিচিত বাহ্যিক চলকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কিন্তু পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দলের সাহায্যে উক্ত চলটিতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সেক্ষেত্রে সমভারীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন- পরীক্ষণ পাত্রদের লিঙ্গ একটি বাহ্যিক চল, যা নির্ভরশীল চলকে প্রভাবিত করতে পারে। এক্ষেত্রে পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দলে সমান সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন- একটি পরীক্ষণের জন্য যদি ২০ জন পুরুষ ও ১০ জন মহিলা পাওয়া যায়, তাহলে পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দল এমনভাবে গঠন করতে হবে যেন, প্রতি দলে ১০ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলা অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রতিসমভারীকরণ : যখন একই পরীক্ষণ পাত্রদের একাধিক পরীক্ষণমূলক অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়, তখন অনেক সময় পরীক্ষণ পাত্রদের প্রথম অধিবেশন এর অভিজ্ঞতা তাদের দ্বিতীয় অধিবেশনের প্রতিক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
এক্ষেত্রে ফলাফলে ভ্রান্তি থাকতে পারে। বিভিন্ন পরীক্ষণমূলক অবস্থার প্রভাব সব পরীক্ষণ পাত্রদের মধ্যে সমানভাবে বিতরণ করে দেওয়ার জন্য প্রতিসমভারীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন- লাল, সবুজ ও হলুদ এ তিনটি রঙের প্রতি প্রতিক্রিয়াকাল নির্ণয় করা হবে। এটা সজ্ঞাত যে, কোন বিশেষ রঙের আলো চোখে নিক্ষেপ করা হলে, তার প্রভাব পরবর্তী আলোর প্রতি প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবান্বিত করতে পারে, তার উপরে পরীক্ষণ পাত্রদের অনুশীলনের প্রভাব ও ক্লান্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এখন এসব বাহ্যিক শর্ত যাতে কোন একদল পরীক্ষণ পাত্রকে বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত না করে, সেজন্য প্রতিসমভারীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। পরীক্ষণে যদি ৩০ জন পরীক্ষণ পাত্র পাওয়া যায়, তাহলে পরীক্ষণ পাত্রদের প্রত্যেককেই তিনটি আলো একবার প্রথমে, একবার শেষে ও একবার মধ্যবর্তী অধিবেশনে উপস্থিত করতে হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে আমরা বলতে পারি যে, উপরে উল্লিখিত কলাকৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আর বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে পরীক্ষণের ফলাফল নির্ভরযোগ্য ও সঠিক হয়। এছাড়া বাহ্যিক চল নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পরীক্ষণের ব্যবহারিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।