মনোবিজ্ঞানের পরীক্ষণে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার চল লিখ।

অথবা, চল এর শ্রেণীবিভাগ কর।
অথবা, চলের শ্রেণীবিন্যাস কর।
অথবা, মনোবিজ্ঞানে চলের প্রকারভেদ লিখ।
অথবা, চলের শ্রেণিবিভাজন কর।
অথবা, চল কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর।। ভূমিকা : চল একটি বৈজ্ঞানিক শব্দ, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Variable এবং বাংলা অর্থ হল চলনশীল বা পরিবর্তনশীল। সাধারণ অর্থে চল বলতে এমন একটা বৈশিষ্ট্য বা গুণ বুঝায়, যা একই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা যেতে পারে। চল অর্থাৎ, চল মূল্যায়ন পরিবর্তনশীল। একটি পরীক্ষণে অনেকগুলো গুণাবলি বা বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ হতে পারে। অতএব চল বলতে আমরা বুঝি যে কোন উপাদান, যা আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাই চল। চল পরীক্ষণের এমন একটা বৈশিষ্ট্য যা ফলাফলের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
চলের প্রকারভেদ : নিম্নে চলের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো-
১. স্বাধীন বা অনির্ভরশীল চল : যে চল আচরণের উপর প্রতিক্রিয়া করতে নিজেই সক্ষম এবং অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হয় না তাকে স্বাধীন বা অনির্ভরশীল বা নিরপেক্ষ চল বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে চলটি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্য কোন চলের উপর নির্ভরশীল না হয়ে কোন একটি চলের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে, তাকে বলা হয় অনির্ভরশীল চল। অর্থাৎ, যে চল অন্য চলের সাহায্য ছাড়া নিজেই আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে তাকে নিরপেক্ষ বা অনির্ভরশীল চল বলা হয়।
২. নির্ভরশীল চল : যে চলকে তার উপস্থিতি-অনুপস্থিতি হ্রাস বা বৃদ্ধির জন্য নিরপেক্ষ চলের উপর নির্ভর করতে হয় তাকে নির্ভরশীল চল বলা হয়। নির্ভরশীল চলের উপস্থিতি ও পরিবর্তন নির্ভর করে অনির্ভরশীল চলের উপস্থিতি ও পরিবর্তনের উপর। অনির্ভরশীল চল পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রাণীর আচরণের যেসব পরিবর্তন ঘটে সেগুলোকে বলা হয় নির্ভরশীল চল। অর্থাৎ, যে চলকে সৃষ্টির জন্য অন্য কারও উপর নির্ভর করতে হয় তাকে নির্ভরশীল চল বলা হয়।মনোবিজ্ঞানের গবেষণায় জীবের প্রতিক্রিয়া বা সাড়া হচ্ছে নির্ভরশীল চল।
৩. যোগ সাধনকারী বা মধ্যবর্তী চল: অনির্ভরশীল এবং নির্ভরশীল চল ছাড়াও আরও এক প্রকার চল আছে এটাকে মধ্যবর্তী চল বলা হয়। তার কারণ এটা নির্ভরশীল ও অনির্ভরশীল চলের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে উভয়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। যেমন- বয়স, অভ্যাস, প্রেষণা ইত্যাদি।
৪. বাহ্যিক চল : বাহ্যিক পরিবেশ থেকে যে চলের উদ্ভব হয় তাকে বাহ্যিক চল বলা হয় বা পরীক্ষণ বিশ্লিষ্ট চল বলা হয়। এ চলগুলোকে পরীক্ষণ কর্তৃক আরোপিত নয় অথচ এগুলো ঘটনাক্রমে পরীক্ষণের সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে।এগুলো ফলাফলের উপর অবাঞ্ছিত প্রভাব বিস্তার করে। বাহ্যিক চল পরীক্ষণের নিরপেক্ষ এবং নির্ভরশীল চলের সাথে সম্পর্কিত হয়। যেমন- গবেষণাগারের তাপমাত্রা, পারিপার্শ্বিক এলাকার গোলমাল, মিছিলের শ্লোগান প্রভৃতি বাহ্যিক চলের উৎপন্ন হবে সে সম্বন্ধে কোন অনুমান করা যুক্তিসংগত হবে না।
৫. নিয়ন্ত্রিত চল : যেসব শর্তের প্রভাব থেকে আচরণ বা পর্যবেক্ষণ ঘটনাকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা হয়, সেসব শর্তকে বলা হয় নিয়ন্ত্রিত চল। কোন কোন পরীক্ষণে কতকগুলো চলকে সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত রেখে আগে অন্য কতকগুলো চলকে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত করা হয়। যেসব বাহ্যিক চলের প্রভাব থেকে নির্ভরশীল চলকে অর্থাৎ, পর্যবেক্ষণীয় আচরণকে মুক্ত রাখা হয়,সেগুলোকে বলা হয় নিয়ন্ত্রিত চল।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, চল মনোবিজ্ঞানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মনোবিজ্ঞানের যে কোন কর্মকাণ্ডে এবং যে কোন পরীক্ষণে চলের উপস্থিতি খুবই দরকার। মনোবিজ্ঞানের যে কোন কিছুকে ভালোভাবে বুঝতে হলে চল সম্পর্কে অবশ্যই সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। মনোবিজ্ঞানের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে মূল্যবান একটি উপাদান।