চল নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য বলতে কী বুঝ?

অথবা, চল নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য কাকে বলে?
অথবা, চল নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্যর সংজ্ঞা দাও।
অথবা, চল নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য কী?
অথবা, চল নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য সম্পর্কে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরীক্ষণে চলের নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব অপরিসীম। পরীক্ষণে চলের নিয়ন্ত্রণ বলতে বুঝায় প্রয়োজন অনুসারে চলসমূহের পরিবর্তন সাধন। আমরা জানি যে, পরীক্ষণ হল নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পর্যবেক্ষণ অর্থাৎ, পরীক্ষণ পরিচালনা করতে হলে পরিবেশ বা পরিস্থিতির উপর পরীক্ষকের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। এর অর্থ হল পরীক্ষক খুশিমতো পরীক্ষণের চলসমূহের সৃষ্টি করতে পারেন অথবা অনুপস্থিত রাখতে পারেন। পরীক্ষণ পদ্ধতির উদ্দেশ্য হল নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় একটি চলের সাথে অন্য একটি চলের সম্পর্ক নির্ণয়। অর্থাৎ, সকল অবাঞ্ছিত চলকে ধ্রুব রেখে একটি চল এর প্রভাবে মানুষ বা প্রাণীর আচরণ বা নির্ভরশীল চলের অনুধ্যান করাই হল পরীক্ষণের উদ্দেশ্য।
চল নিয়ন্ত্রণের ভারসাম্য: এমন কতকগুলো চল আছে, যেগুলোকে অপসারণ করা যায় না বা অবস্থার সমতাকরণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম কৌশল হল ভারসাম্য সৃষ্টি করা। এ পদ্ধতিতে সব বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সমান সমান দু’টি দল গঠন করা হয়। এক দলকে পরীক্ষণ দল ও এক দলকে নিয়ন্ত্রিত দল বলা হয়। পরীক্ষণ দল এবং নিয়ন্ত্রিত দল সব শর্তের দিক থেকেই সমান থাকবে। পার্থক্য শুধু এটুকু যে, পরীক্ষণ দলে নিরপেক্ষ চল প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত দলে উক্ত চল প্রয়োগ করা হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, একটি পরীক্ষণের জন্য ২০ জন মহিলা এবং ৩০ জন পুরুষ পরীক্ষক পাওয়া গেল। লিঙ্গভেদে আচরণের পার্থক্য ঘটতে পারে বলে লিঙ্গের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য পরীক্ষণ করার সময় পরীক্ষক ভারসাম্য সৃষ্টি পদ্ধতি এমনভাবে তাদের পরীক্ষণ দল ও নিয়ন্ত্রিত দলে ভাগ করবেন, যাতে উভয় দলে নারী-পুরুষের সংখ্যা সমান হয়। নিয়ে ছকে ভারসাম্য পন্থায় লিঙ্গের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হল :

পরীক্ষণের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি ব্যবহার করা যায়। মনে করি, স্মৃতি যন্ত্র বা ত্বকের বৈদ্যুতিক ক্রিয়া পরিমাপক যন্ত্র। এসব যন্ত্রের (দু’টি যন্ত্রের) সংস্করণের মধ্যে থাকতে পারে। যেমন- একটি পুরানো, স্মৃতি যন্ত্র এবং নতুন যন্ত্রের ঘূর্ণনের গতিবেগের পার্থক্য থাকতে পারে। এসব ক্ষেত্রে গবেষককে দু’টি যন্ত্রই ব্যবহার করতে হয়। অর্ধেক সংখ্যক পরীক্ষণ পাত্রকে প্রথমে নতুন যন্ত্রটি এবং পরে পুরাতন যন্ত্রটির মাধ্যমে শব্দ তালিকা উপস্থাপন করতে হবে। আবার বাকি
সংখ্যক পরীক্ষণ পাত্রকে পুরাতন যন্ত্রের মাধ্যমে এবং পরে নতুন যন্ত্রটির মাধ্যমে শব্দ তালিকা উপস্থাপন করতে হবে।
McGuigan (1969 সালে) এ ভারসাম্য পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে গবেষকের পার্থক্যের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। মনে করি, দু’জন গবেষক যৌথভাবে একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। একজন গবেষক কাজটি শুরু করলেন।কোন কারণে তার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় জন কাজ শুরু করলেন। এতে পরীক্ষণের ফলাফলে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে।
কারণ এক্ষেত্রে দু’জন পরীক্ষক দু’ভাবে পরীক্ষণ পাত্রদের প্রভাবান্বিত বা দু’ভাবে পরীক্ষণ পাত্রদের ব্যবহার করতে পারেন।
এ পার্থক্যজনিত ভ্রান্তি দূর করার জন্য ভারসাম্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন- পরীক্ষণ দলের অর্ধেক সংখ্যক পরীক্ষণ পাত্রকে প্রথম গবেষক এবং পরে দ্বিতীয় গবেষকের অধীনে পরীক্ষণ করতে হবে। আবার নিয়ন্ত্রিত দলের অর্ধেক পরীক্ষণ পাত্রকে অর্ধেক দ্বিতীয় গবেষক এবং পরে প্রথম গবেষকের অধীনে কাজ করতে হবে। তাহলে উভয় গবেষকের প্রভাব দু’দলের উপর সমান প্রভাব পড়বে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যে কোন পরীক্ষণ করতে হলে চলের নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোন পরীক্ষণই কোন সময় সম্ভব হবে না। সুতরাং, দেখা যায় যে, পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানের সঠিক ফলাফল তথা অনির্ভরশীল ও নির্ভরশীল চলের সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক।