অথবা, কেস ব্যবস্থাপনা বলতে কী বুঝ? মাঠকর্ম অনুশীলনে কেস ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা কর।
অথবা, কেস ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? মাঠকর্ম অনুশীলনে কেস ব্যবস্থাপনার দায়িত্বগুলো কী কী? আলোচনা কর।
অথবা, কেইস ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দাও। এর দায়িত্ব ও কার্যাবলি লিখ।
অথবা, কেইস ব্যবস্থাপনার পরিচয় দাও। কেস ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি কী কী? বর্ণনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : সমাজকর্মে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কেস ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচিত।কেস ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
কেস ব্যবস্থাপনা : মাঠকর্ম অনুশীলনে সমাজকর্মের ছাত্রছাত্রীরা সমাজকর্মের জ্ঞানকে বাস্তবে সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে প্রয়োগ করে থাকে।এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা শিক্ষানবিস সমাজকর্মী হিসেবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির (Client) সমস্যা সমাধানে প্রচেষ্ট চালায়।এজন্য লক্ষ্যভুক্ত Client কে গ্রহণ করে তার কেস ব্যবস্থাপনা করে থাকে।কেস ব্যবস্থাপনা বলতে সাহায্যার্থী বা সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সেবাদান প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধান, পরিকল্পনা ও সার্বিকভাবে দায়িত্ব পালনকে বুঝায়। সমাজকর্ম অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, “A Procedure to plan, seek, and monitor services from different social agencies and staff on behalf of a client.” অর্থাৎ, সাহায্যার্থীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সামাজিক ও জনশক্তি যে পরিচালনা, অনুসন্ধান ও নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তাকে বুঝায়।
কেস ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি : নিম্নে কেস ব্যবস্থাপনার কার্যাবলি আলোচনা করা হলো:
১. সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে গ্রহণ করা (Accepting of client) : কেস ব্যবস্থাপনার অন্যতম কাজ হলো সাহায্যার্থীকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা। সাহায্যার্থী তার সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়ে মানসিকভাবে দুর্বল থাকে। অন্যদিকে, মাঠকর্মী সাহায্যার্থীকে তার জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।এক্ষেত্রে সমাজকর্মী তার সচেতনতা কাজে লাগান।গ্রহণ নীতি অনুসারে শিক্ষার্থী এখানে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।এর ফলে সাহায্যার্থীও প্রকৃত সেবা পেয়ে থাকে।
২. সাক্ষাৎকার (Interview) : কেস ব্যবস্থাপনার আরেকটি দিক হলো সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার হলো সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থীর মধ্যে কথোপকথন। এর মাধ্যমে মাঠকর্মী ও সাহায্যার্থীর মধ্যে পেশাদার সম্পর্ক গড়ে উঠে। সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে সঠিকভাবে অনুধ্যান করার সুযোগ পায় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার সমস্যার গভীরে পৌঁছতে পারে। এর ফলে ব্যক্তির কেস ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হয়।
৩. দায়িত্ব পালন (Responsibility) : এজেন্সিতে কাজ করতে এসে মাঠকর্মীকে কতিপয় দায়িত্ব পালন করতে হয়।এ ধরনের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান সমাজকর্মীকে প্রদান করে থাকে।প্রতিষ্ঠান কতিপয়ক কর্মসূচি মাঠকর্মীর মাধ্যমে সম্পাদন
করে। মাঠকর্ম অনুশীলন করতে এসে সমাজকর্মী নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করে সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
৪. ইতিহাস লিপিবদ্ধকরণ (History of recording) : কেস ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এজেন্সিতে আসা সাহায্যার্থীর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা। এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর যাবতীয় তথ্যাদি নথিভুক্ত করতে হয়।রেকর্ডকৃত যাবতীয় তথ্য সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। এভাবে সাহায্যার্থীর যাবতীয় তথ্য লিপিবদ্ধ করা অপরিহার্য।
৫. প্রেরণ (Referral) : সাহায্যার্থী সাহায্যের প্রত্যাশায় সংস্থার দারস্থ হয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সাহায্যের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণের প্রয়োজন হলে সাহায্যার্থীকে সেখানে প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।কেস ব্যবস্থার এ পর্যায়ে সাহায্যার্থীকে পূর্ণাঙ্গ সেবা প্রদান করাই মূল লক্ষ্য।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কেস ব্যবস্থাপনা সাহায্যার্থীকে সাহায্য প্রদানে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।কেস ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কতিপয় কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। এসব কার্যক্রম সম্পাদনের উপর এর সফলতা নির্ভরশীল।এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীকে গ্রহণ, সাক্ষাৎকার, লিপিবদ্ধকরণ, দায়িত্ব পালন, প্রেরণ, প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হয়।