সামাজিক সংস্থায় সমাযোজনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।

অথবা, সামাজিক কোন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, সমাযোজনের প্রয়োজনীয়তা কী?
অথবা, সমাযোজনের তাৎপর্য বর্ণনা কর।
অথবা, কেন কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে সমাযোজন প্রয়োজন?
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক সংস্থাসমূহ সামাজিক সেবা প্রদানের জন্য একটি নির্দিষ্ট নেতৃত্বের অধীনে Board groups, Staff groups, Community groups, Clienteles group কাজ করে। সংস্থার Purpose → Policy Programme → Project এ ধারাবাহিক কর্মপ্রক্রিয়ার প্রতিটি স্তরে প্রত্যেক group কে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাহীকে পুরো সংস্থায় একটি ভালো সংযোজন তৈরি করতে হয়।


নির্বাহী প্রশাসনের Nerve Centre হিসেবে কখনো Liaison Role আবার কখনো Leader Role প্রয়োগ করে তথ্যসংগ্রহ করেন এবং Dissminator মুখপাত্র ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী হিসেবে তথ্য বিভিন্ন ইউনিটে প্রদান করেন এবং
বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন।
এতে করে নির্বাহীর সাথে বিভিন্ন দলের সদস্যদের, এক দলের সাথে আরেক দলের, এক দলের সদস্যদের সাথে আরেক দলের সদস্যদের ভাবাবেগ, অভিজ্ঞতা, কর্মপদ্ধতি, সফলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য লেনদেন হয়। একই সাথে একজন মক্কেলের তৃণমূল পর্যায়ের ধারণা, অভিজ্ঞতা, প্রতিক্রিয়া, সমস্যা, চাহিদা, সমাযোজন Channel এর মাধ্যমে বা প্রধান নির্বাহীর কাছে পৌঁছে যা সংস্থার পরবর্তী কর্মসূচি Modification এ সহায়তা করে।
সামাজিক সংস্থায় সমাযোজনের গুরুত্ব : নিম্নে সামাজিক প্রশাসনের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. তথ্য আদান-প্রদান : প্রশাসনের বিভিন্ন অংশ এবং ব্যক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য তথ্য আদান-প্রদান প্রয়োজন। মানবদেহে যেমন Motor nerve ও sentory nerve এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তনের খবর আদান-প্রদান হয়ে উপযুক্ত সমন্বয় হয় তেমনি সংগঠনেও সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য লাইন, স্টাফসহ
সকল স্তরে পৌছানো যায়। এতে করে সংস্থার ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা সম্ভব হয়।
২. চিন্তার স্বচ্ছতা : সামাজিক সংস্থায় সম্পূর্ণ, স্থির কিংবা স্বয়ংসম্পূর্ণ বলতে কোনো কিছু নেই। কেননা, সমাজের মৌলিক কাঠামোকে ঘিরে Super structure প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে Multidimensional রূপ পরিগ্রহ করছে। সুতরাং, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে যে সব নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সে সম্পর্কে চিন্তার স্বচ্ছতা থাকতে হবে।
৩. কর্মকর্তা কর্মচারীদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক : প্রশাসনে Employee ও Employer অর্থাৎ, Executive ও Worker এর মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ও পারস্পরিক সাহায্য করতে গিয়ে তাদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।ফলে সংস্থার তথা প্রশাসনের উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হয়। সুতরাং, এক্ষেত্রেও সমাযোজনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. দায়বদ্ধতা : সংস্থায় প্রত্যেকের নিকট প্রত্যেকে দায়বদ্ধ। এ দায়বদ্ধতা সঠিকভাবে পালনের জন্য সমন্বয় দরকার। আবার কার কি দায়িত্ব এবং তা যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না এক্ষেত্রে সমন্বয় করতেও সংযোজন সহায়তা করে।
৫. উপযুক্ত সময় এবং স্থান : প্রশাসনে সমন্বয় বজায় রাখতে হলে সংস্থা কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের মধ্যে সমন্বয় : প্রশাসনের যাবতীয় কাজ যাতে সংস্থার উদ্দেশ্যের সাথে সংগতি রেখে করা হয় সেজন্য বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।
৭. প্রতি মুহূর্তে সক্রিয় রাখা : প্রশাসনের বিভিন্ন স্বাধীন ইউনিটের মধ্যে গতিশীলতা আনতে তাদেরকে সক্রিয় রাখতে তথ্য সর্বদা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে, এতে সমন্বয় সহজ হয়। এছাড়া সংযোজন প্রক্রিয়ায় তথ্য সরবরাহ করে কর্মকর্তা থেকে শ্রমিক পর্যন্ত গোটা প্রশাসনকে প্রতিটি মুহূর্তে সক্রিয় রাখা সম্ভব।
৮. অংশগ্রহণ : প্রশাসনের অভীষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য প্রশাসনের মধ্যে অবস্থানরত সকল দলের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আবশ্যক। কিন্তু প্রকৃতিগত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী বলে সে যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গিকে খারাপ চোখে দেখে
এবং সমন্বয় ভেঙে পড়ে। যেমন- আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির প্রতি জনগণের মনোভাব।
৯. সার্বিক কার্যক্রম মূল্যায়ন : সংস্থার উদ্দেশ্যের সাথে তৎপরতা কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা মূল্যায়ন আবশ্যক। এ মূল্যায়নের জন্য সংস্থার Action কে মূল্যায়ন করতে হয়। সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম মূল্যায়নে সমন্বয় করতে সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : একক কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা অনেক সময় সঠিক হয় না।তাই সুসমন্বিত প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তবে প্রশাসকের Decision যত
ঝুঁকিপূর্ণ হোক না কেন তা কোনো প্রকারেই কার্যকর হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট প্রেরিত না হয়।সুতরাং, সর্বজনগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাস্তবায়ন করলে তা (Communication) এর মাধ্যমে সমন্বয়সাধন করা হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক প্রশাসনে সংযোজন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার পালন করে। একই সাথে সমন্বয় দাবিদার। প্রশাসনকে গতিশীল করে সংস্থার উদ্দেশ্য অর্জনে সংযোজন প্রভাবকের
ও প্রশাসন সমান গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট লক্ষ্যাভিমুখে বেগবান হয়। আর সংযোজন ইউনিটসমূহকে বেগবান হতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।