স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে আধুনিক পদ্ধতিগুলো উলেখ কর।

অথবা, স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে আধুনিক পদ্ধতিগুলো আলোচনা কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে নতুন বা আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, স্থানীয় রাজনীতি অধ্যয়নে আধুনিক পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে যুগোপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে আধুনিক পদ্ধতিগুলোর বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : যে কোনো দেশের প্রশাসন ব্যবস্থার অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো স্থানীয় সরকার। স্থানীয় সরকার অধ্যয়নের জন্য যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ
করা হয়েছে। বর্তমানযুগে গতানুগতিক অধ্যয়ন পদ্ধতির জায়গা দখল করেছে আধুনিক পদ্ধতিগুলো।
স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে আধুনিক পদ্ধতিসমূহ : স্থানীয় সরকার অধ্যয়নের জন্য গতানুগতিক পদ্ধতি পরিহার করে যেসব নতুন পদ্ধতির উন্নয়ন করা হয়েছে তা হচ্ছে আধুনিক পদ্ধতি। নিম্নে আধুনিক পদ্ধতিগুলো আলোচনা
করা হলো :
১. আচরণগত পদ্ধতি : স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে আচরণগত বা মনোবিজ্ঞান পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আচরণগত পদ্ধতির বিশ্লেষণের মূল একক হলো ব্যক্তি। এ পদ্ধতিতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নিয়োজিত ব্যক্তির কার্যকলাপ অনুভূতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা ও পছন্দ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে থাকে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ ও তাদের সত্যাসত্য যাচাইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের সুসমন্বিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অনুসন্ধানই হলো আচরণবাদ। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর রাজনৈতিক আচরণকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যাখ্যা করা
হয়। মূলত এ পদ্ধতিতে ব্যক্তির কার্যকলাপ, অনুভূতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। স্থানীয় সংগঠনের মানবিক কার্যক্রমের আলোচনাসহ আচরণগত পদ্ধতির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।
২. কাঠামো কার্যগত পদ্ধতি : স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে কাঠামো কার্যগত পদ্ধতি একটি আধুনিক ও কার্যকরী পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কি কার্য কোন কাঠামো দ্বারা সম্পাদিত হয় তার ভিত্তিতে স্থানীয় রাজনীতি ব্যাখ্যা করে এবং তুলনামূলক অধ্যয়ন করার চেষ্টা করে। বর্তমানে স্থানীয় রাজনীতি অধ্যয়নে এ পদ্ধতি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কাঠামো কার্যগত পদ্ধতির প্রবক্তা হলেন জি. এ. অ্যালমন্ড।
৩. পরিসংখ্যানিক অধ্যয়ন পদ্ধতি : স্থানীয় সরকার অধ্যয়ন পদ্ধতিগুলোর মধ্যে পরিসংখ্যানিক অধ্যয়ন পদ্ধতি একটি আধুনিক অধ্যয়ন পদ্ধতি। স্থানীয় সরকার স্থানীয় জনগণের উপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে। জনগণের উপর পরিচালিত তথ্য উপাত্ত থেকে স্থানীয় সরকার এ পদ্ধতির মাধ্যমে খুব সহজে জীবনযাত্রার মান, সাক্ষরতার হার, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, উৎপাদন, ভাগ, বণ্টন, আমদানি ও রপ্তানি সম্পর্কে জানা যায়। ফলে স্থানীয় সরকার তার
প্রয়োজনমতো এবং চাহিদা মাফিক কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করতে পারে।
৪. মনোবিজ্ঞান অধ্যয়ন পদ্ধতি : বর্তমান সময়ে স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে মনোবিজ্ঞান অধ্যয়ন পদ্ধতি একটি অন্যতম আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার স্থানীয় জনগণের মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে। স্থানীয় পর্যায়ে জনমত, স্থানীয় আদর্শ, স্থানীয় জাতীয়তা, স্থানীয় রাজনৈতিক মূল্যবোধ বিচারবিশ্লেষণ করে থাকে।
৫. গোষ্ঠী অধ্যয়ন পদ্ধতি : যে পদ্ধতিতে কোন স্বার্থ বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য কতিপয় ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তাকে গোষ্ঠী তত্ত্ব বলে। এ তত্ত্বের মূল বক্তব্য হচ্ছে কোন দেশের রাজনৈতিক ব্যাখ্যা করতে গ্রুপগুলোকে
ব্যাখ্যা করতে হবে। এ পদ্ধতিতে স্থানীয় পর্যায়ে সমাজব্যবস্থায় অসংখ্য গোষ্ঠী থাকে। প্রত্যেক গোষ্ঠীই একে অপরের সাথে অব্যাহতভাবে ক্রিয়াকলাপে লিপ্ত থাকে। স্থানীয় এ সকল গ্রুপগুলো স্থানীয় সরকারের কাছে তাদের
দাবিদাওয়া উত্থাপন করে, এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে স্বার্থের সমস্যা নির্ণয়ের ও সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়।
৬. যোগাযোগ অধ্যয়ন পদ্ধতি : যোগাযোগ অধ্যয়ন পদ্ধতি হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাব বা তথ্যের আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া। এ পদ্ধতির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার ও রাজনীতির অস্তিত্ব সংরক্ষণ, রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, রাজনীতিতে কাঠামোগত প্রভাব ইত্যাদি বিশ্লেষণ করা হয়।
৭. সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি : স্থানীয় সরকার ও রাজনীতি অধ্যয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। যে কোনো ধরনের সরকার ব্যবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। রাজনীতি বিশ্লেষণে এ পদ্ধতি অধিক মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যতীত কোনো কাজ সম্পন্ন হয় না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্থানীয় সরকার অধ্যয়নে আধুনিক পদ্ধতিগুলো যুগোপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক পদ্ধতিগুলো তুলনামূলক ও বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অনানুষ্ঠানিক উপাদানসমূহ ব্যাখ্যা করে। আধুনিক পদ্ধতি মূলত বাস্তবভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত। কেননা
আধুনিক পদ্ধতি স্থানীয় সরকারের ব্যাপক ও বহুবিধ ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে বিষয়বস্তুর বাস্তবভিত্তিক ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা করে।