অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, শ্রেণিবদ্ধকরণের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : অনুসন্ধান ক্ষেত্র থেকে তথ্যসংগ্রহের পরবর্তী পর্যায় হলো তথ্যসমূহের প্রক্রিয়াকরণ । সংগৃহীত তথ্যের অন্তর্নিহিত গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্য তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয় । প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম যে দুটি ধাপে সম্পন্ন হয় তাহলো শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং সারণিবদ্ধকরণ। সংগৃহীত তথ্যকে সমজাতীয় বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে সাজানোর প্রক্রিয়াই শ্রেণিবদ্ধকরণ । আর সারণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় উপাত্তসমূহকে বিভিন্ন সারণিতে সাজানো হয়। শ্রেণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়াকে সারণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার পূর্ববর্তী স্তর বলা যেতে পারে। কারণ শ্রেণিসমূহকে সারণিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয় ।
শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা : প্রক্রিয়াকরণের প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে পরিসংখ্যানে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ পরবর্তী প্রক্রিয়াসমূহ ও বিশ্লেষণের যথার্থতা উপযুক্ত শ্রেণিবদ্ধকরণের উপরই নির্ভর করে । শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা নিম্নে উপস্থাপন কর হলো :
১. পার্থক্য নির্ণয়ে : শ্রেণিবদ্ধকরণে তথ্যরাশির বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে এদের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখান যায়। অর্থাৎ সংগৃহীত উপাত্তসমূহের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যের ভিত্তিতে এগুলোর সুস্পষ্ট বর্ণনা প্রদান করা। সুতরাং উপাত্তসমূহের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
২. তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবনে : তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবনে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শ্রেণিবদ্ধকরণে সুশৃঙ্খলিত উপস্থাপনের মাধ্যমে তথ্যাদি সম্বন্ধে মোটামুটি জ্ঞান দান করে তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করানো সম্ভব হয় ।
৩. অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিহার : তথ্যাদি থেকে অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়াদি ভিন্ন করে এদের সঠিক ভূমিকা নির্ণয় করা যায়। মূলত শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিত্যক্ত হয়। তাই অপ্রয়োজনীয় অংশ পরিহারে শ্রেণিবদ্ধকরণের গুরুত্ব অপরিসীম ।
৪. তথ্যাদিকে যুক্তিসংগতভাবে উপস্থাপন : তথ্যাদিকে যুক্তিসংগতভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কেননা শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে তথ্যাদিকে যুক্তিসংগতভাবে উপস্থাপন করা যায়। আর তথ্যাদিকে যুক্তিসংগতভাবে উপস্থাপন করে শ্রেণিবদ্ধকরণ, তথ্যাদিকে পরস্পর তুলনার উপযোগী করে তোলে এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া ও বিশ্লেষণের স্পষ্ট ভিত্তি প্রস্তুত করা যায় ।
৫. সহজবোধ্য : শ্রেণিবদ্ধকরণ সহজ সরল উপস্থাপনের মাধ্যমে তথ্যকে অন্যের নিকট সহজবোধ্য করে তোলে এবং অল্প সময়ে তথ্যের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়। এছাড়া শ্রেণিবদ্ধকরণে উপস্থাপিত তথ্যের মাধ্যমে গবেষকগণ অতি সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।
৬. পরবর্তী ব্যবহারের উপযোগী : পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী করার ক্ষেত্রে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম । কেননা শ্রেণিবদ্ধকরণের দ্বারা সংগৃহীত তথ্যগুলোকে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায়। অর্থাৎ উপাত্তসমূহকে পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণ ও সারণিবদ্ধকরণের উপযোগী করে তোলা যায় ।
৭. বিশ্লেষণ কাজে সহায়তা : শ্রেণিবদ্ধকরণ ও উপাত্তসমূহের বিশ্লেষণ কাজে সহায়তা করে। মূলত শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে উপাত্তসমূহের সঠিক পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যাদান এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয় ।
৮. শ্রেণিভেদ সম্পর্কে ধারণা লাভ : তথ্য সমৃদ্ধ বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের স
মারোহ থাকে । শ্রেণিবদ্ধকরণের ফলে তথ্যগুলোর শ্রেণিভেদ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। অর্থাৎ শ্রেণিভেদ সম্পর্কে ধারণা লাভে শ্রেণিবদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, পরিসংখ্যানে বিভিন্ন অনুসন্ধানকার্যে উপাত্তের শ্রেণিবদ্ধকরণ ও সারণিবদ্ধকরণের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত ব্যাপক। শ্রেণিবদ্ধকরণের মাধ্যমে উপাত্তসমূহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা যায়। ফলে উপাত্তসমূহকে যথোপযুক্তভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। এজন্য পরিসংখ্যানে শ্রেণিবদ্ধকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।