উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে বার ভূঁইয়াদের আবির্ভাব ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তীকাল হতে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী
সময়ে। আলোচ্য সময়ে মুঘলদের বিরুদ্ধে যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন, ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে তারাই বারোভূঁইয়া। মুঘলদের কবল হতে বঙ্গদেশকে মুক্ত রাখার জন্য যেসব মুসলমান ও হিন্দু জমিদারের সংগ্রাম স্মরণীয় হয়ে আছে, তাদের মধ্যে ঈসা খান, মুসা খান, রাজা প্রতাপাদিত্য, কেদার রায় প্রমুখ নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। নিম্নে রাজা প্রতাপাদিত্যের
পরিচয় তুলে ধরা হল :
→ রাজা প্রতাপাদিত্য : বঙ্গের বারোভূঁইয়াদের মধ্যে রাজা প্রতাপাদিত্য অন্যতম ছিলেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক তাকে স্বাধীন জমিদারদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু কৃতিত্বের দিক দিয়ে বিচার করলে প্রতাপাদিত্যকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলা যায় না। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে তার শক্তি, বীরত্ব ও দেশভক্তির যে উচ্ছ্বসিত বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলোর অধিকাংশেরই কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। যশোহর, খুলনা, বাকেরগঞ্জ জেলার সমন্বয়ে তার রাজ্য গঠিত ছিল। তার রাজধানী ছিল ধূমঘাটে। তার নির্মিত্ত বিভিন্ন ইমারতের মধ্যে দরবার ঘর, হাম্মামখানা, ঈশ্বরপুরে বিভিন্ন সৌধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু বারবার পরাজিত হয়ে প্রতাপাদিত্য বিনাশর্তে মুঘল প্রভুত্ব স্বীকার করে নেন। প্রতাপাদিত্যের শেষ জীবন ছিল রহস্যপূর্ণ। লোকশ্রুতি অনুযায়ী, লোহার পিঞ্জরে আবদ্ধ হয়ে দিল্লি আসার পথে বারানসী নামক স্থানে তিনি ১৬১১ সালে বিষপানে আত্মহত্যা করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাসে যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্যের নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি মুঘলদের আনুগত্য স্বীকারের পূর্বে বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে যান। তিনি যশোহরে বীরত্বের সাথে জমিদারি পরিচালনা করেন।