উত্তর : ভূমিকা : ১৬৬৪ সালের মার্চে শায়েস্তা খান রাজমহল হয়ে ঢাকায় পৌঁছেন এবং বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন। এখানে তিনি দুই মেয়াদে শাসন কার্য পরিচালনা করেছিলেন। সুবাদার শায়েস্তা খান বাংলার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। তার আমলে বাংলায় সুখ-সমৃদ্ধি বজায় ছিল। শায়েস্তা খান বিভিন্ন কার্যকরী কৌশল অবলম্বন করে শাসনকার্য পরিচালনা
করেন। নিম্নে কুচবিহার ও অন্যান্য সীমান্ত রাষ্ট্রের সাথে শায়েস্তা খানের সম্পর্ক তুলে ধরা হল :
কুচবিহার ও অন্যান্য সীমান্তরাষ্ট্রের সাথে শায়েস্তা খানের সম্পর্ক : শায়েস্তা খানের পূর্ববর্তী সুবাদার মীর জুমলার অকাল মৃত্যুতে কুচবিহার ও অন্যান্য সীমান্ত চুক্তির অনেকগুলো অসমাপ্ত রয়ে যায়। শায়েস্তা খান বাংলায় পৌছে মীর জুমলার অসমাপ্ত কার্য সম্পন্ন করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। মুঘল সম্রাট কুচরাজের অবাধ্যতার জন্য শাস্তি দিয়ে শায়েস্তা খানকে সেখানে মুঘল শাসন কায়েম করতে বলেন। ১৬৬৪ সালে শায়েস্তা খান কুচবিহার অভিযানের পরিকল্পনা করলে কুচরাজা ভয় পায় এবং পাঁচলক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণ দিয়ে শায়েস্তা খানের বশ্যতা স্বীকার করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত মুঘল সরকারের সাথে কোনো গোলমাল হয়নি। মীর জুমলার শাসনামলে জয়ন্তিয়া রাজ মুঘল এলাকা সিলেটে হানা দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৬৬৪ সালে বাংলায় শায়েস্তা খানের আগমনের কথা শুনে তিনি তার নিকট আত্মসমর্পণ ও কর প্রদানের সম্মতি জানিয়ে পত্র দিলেন। শায়েস্তা খান তার শর্তে রাজি হয়ে তাকে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করার অনুমতি প্রদান
করলেন। কিন্তু ১৬৮২ সালে নভেম্বর মাসে জয়ন্তিয়ার রাজা তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সিলেটে পুনরায় হানা দিলেন। শায়েস্তা খান
এবার কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন এবং রাজাকে শাস্তি দেয়ার জন্য পুত্র ইরাদাত খানকে পাঠালেন। রাজা ভয়ে পলায়ন করলেন এবং জয়ন্তিয়া মুঘল অধিকার আসল। ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দিকে তিনি মুরাং এর পার্বত্য এলাকায় আর একটি অভিযান প্রেরণ করলেন। এর রাজা সহজেই আত্মসমর্পণ করে সম্রাটকে কর দিতে সম্মত হলেন।
উপসংহার : সুবাদার শায়েস্তা খান বাংলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তিনি বার্ধক্য বয়সে এসেও বাংলায় শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন । সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে অরাজকতা দূর করে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তাই আজীবন বাংলার মানুষ শায়েস্তা
খানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।