উত্তর : ভূমিকা : জাহাঙ্গীর কুলি খানের মৃত্যুর পর ইসলাম খানকে সম্রাট জাহাঙ্গীর বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করেন। তিনি ছিলেন সুদক্ষ শাসক ও দুর্ধর্ষ সেনাপতি ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ। বাংলার বার ভূঁইয়াদেরকে দমন করে এদেশে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করার কৃতিত্ব ছিল সুবাদার ইসলাম খানের। তিনি শুধু বার ভূঁইয়াদের দমন করেননি, সারাদেশে সুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। নিম্নে ইসলাম খানের কার্যাবলি তুলে ধরা হলো :
→ ইসলাম খানের কার্যাবলি :
১. রাজধানী স্থানান্তর : ইসলাম খান খুব বিচক্ষণ শাসন কর্তা ছিলেন। শাসনভার গ্রহণ করেই তিনি বুঝতে পারেন যে, বার ভূঁইয়াদের নেতা মুসা খানকে দমন করতে পারলে তার পক্ষে অন্যান্য জমিদারদেরকে বশীভূত করা সহজসাধ্য হবে। সেজন্য তিনি ১৬১০ সালে রাজধানী রাজমহল হতে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেন।
২. নৌবাহিনী গঠন : জমিদারদের নৌবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্যে তিনি শক্তিশালী নৌবহরের ব্যবস্থা করেন। ইসলাম খান জল ও স্থলপথে মুসাখান ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের আয়োজন করেন।
৩. বার ভূঁইয়াদের ঐক্য নষ্ট : কূটনীতির সাহায্যে ইসলাম খান বার ভূঁইয়াদের ঐক্য নষ্ট করতে সচেষ্ট হন।
৪. ভূষণা অঞ্চল দখল : ভূষণা অঞ্চলের জমিদার সত্যজিৎ দিন মুঘলদের প্রতিরোধের পর মুঘল বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। তার
সাহায্যে মুঘলরা মজলিশ কুতুবের ফতেহাবাদ অধিকার করে।
৫. চন্দ্রদ্বীপ অধিকার : বার ভূঁইয়ার নায়ক মুসা খানের আত্ম- সমর্পণের পর অন্যান্য জমিদাররা মুঘল শাসকদের বশ্যতা স্বীকার
করেন। চন্দ্রদ্বীপের রামচন্দ্র এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
৬. কামরূপ জয় : বাংলায় মুঘল শাসন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত।হওয়ার পর ইসলাম খান কামরূপ জয়ের পরিকল্পনা করেন।
কামরূপের রাজা পরীক্ষিত নারায়ণ সুসংয়ের কুচজমিদার রাজা রঘুনাথের রাজ্য আক্রমণ করলে তিনি ইসলাম খানের সাহায্য
প্রার্থনা করেন। ইসলাম খান শেখ কামালের নেতৃত্ব সৈন্য প্রেরণ করেন এবং শেখ কামাল জয় লাভ করে কামরূপ দখল করেন।
৭. ওসমান খানকে দমন : ১৬১১ সালে ইসলাম খান বিদ্রোহী আফগান নেতা ওসমান খানের রাজধানী বোকাইনগর আক্রমণ করে তা অধিকার করেন।
উপসংহার : সুবাদার ইসলাম খান নিঃসন্দেহে বাংলার ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠতম সুবাদার ছিলেন। তিনি যেমন সুদক্ষ শাসক তেমনি দুর্ধর্ষ সেনাপতি ও দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি দৃঢ় ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলার বিভিন্ন বিদ্রোহ দমন করেন।