উত্তর : ভূমিকা : বাংলার উত্তরাঞ্চলের
প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরা প্রাচীনকাল থেকে হিন্দু ধর্মীয় শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল। মুসলমানদের বাংলা বিজয়ের পরও ত্রিপুরা রাজ্য হিন্দু রাজাদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। সীমান্ত রাজ্য হওয়ায় বাংলার সাথে ত্রিপুরার কখনো বন্ধুত্ব, আবার কখনো শত্রুতা হয়। তবে ত্রিপুরা কখনোই বাংলার চেয়ে বেশি শৌর্যবীর্যের অধিকারী হতে পারেনি। নিম্নে বাংলার সুলতানদের সাথে ত্রিপুরার শাসকদের সম্পর্ক তুলে ধরা হলো।
ত্রিপুরার পরিচয় : ত্রিপুরা পূর্ববঙ্গের একটি রাজ্যের নাম। ত্রিপুরার রাজার নাম ধন্যমাণিক। ত্রিপুরা শাসকদের সাথে বাংলার সুলতানদের সম্পর্ক : সুলতানি আমলের শাসকদের সাথে ত্রিপুরার সম্পর্ক নিম্নরূপঃ
১. মুহাম্মদ বিন তুঘলকের সাথে ত্রিপুরার সম্পর্ক : দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক বাংলার বাহাদুর শাহকে বাহরাম খার সাথে যুগল শাসক নিয়োগ করেন। এ সময় ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে বাংলার শাসকদের সংঘর্ষ হয়েছিল ।
২. ইলিয়াস শাহী বংশের সাথে ত্রিপুরার শাসকদের সম্পর্ক : ইলিয়াস শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ
ত্রিপুরা রাজ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ত্রিপুরার “রাজমালা” কাহিনীতে বর্ণিত আছে, ত্রিপুরা ভাস্কর পা পর ১৮টি
ছেলে ছিল। রাজা ভাস্কর পা কনিষ্ঠ পুত্র ফা-কে উত্তরাধিকারী করে মারা যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর অন্যান্য ১৭ জন ভাই রত্ন
ফা-কে সিংহাসন চ্যুত করে এবং তাড়িয়ে দেন। রত্ন ফা বাংলার সুলতানের আশ্রয় প্রার্থনা করেন। সুলতান তাঁকে আশ্রয় দেন এবং সুলতানের সাহায্যে তিনি হৃতরাজ্য ফিরে পান।
৩. হুসেন শাহী যুগে ত্রিপুরার সাথে সম্পর্ক : হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এর সাথে ত্রিপুরার রাজার ভালো সম্পর্ক ছিল না। হুসেন শাহ ও ত্রিপুরার রাজার মধ্যে অনেকদিন ধরে যুদ্ধ চলে।
৪. নসরত শাহের সাথে ত্রিপুরার সম্পর্ক : আলাউদ্দিন হুসেন শাহের পুত্র নসরত শাহের সাথেও ত্রিপুরা রাজ্যের রাজার ভালো সম্পর্ক ছিল না। ত্রিপুরা রাজ্য দেবমানিক্য চট্টগ্রাম
অধিকার করলে ১৫২২-১৫২৭ সাল পর্যন্ত নসরত শাহের সাথে দেবমাণিক্যের সংঘর্ষ হয়।
উপংসহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ত্রিপুরার শাসকদের সাথে সুলতানি শাসকদের কখনো সুসম্পর্ক আবার কখনো বৈরিতা ছিল। তবে খুব বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কখনো হয়নি বলে ধারণা করা হয়।