উত্তর : ভূমিকা : সুলতানি আমলে ধর্মের ক্ষেত্রে হিন্দু- মুসলিম সংস্কৃতির পরস্পর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। ইসলামের প্রভাবের ব্যাপকতায় হিন্দু সমাজে রক্ষণশীলতা ও জাতিভেদ প্রথা কঠোর হয়ে উঠেছিল। এ সময় উপযোগী ‘ভক্তিবাদ’ নামক উদার ধর্মনীতির উদ্ভব ঘটেছিল। সব ধর্মের সমতা, এক ঈশ্বরবাদে বিশ্বাস, ভক্তি ও প্রেমের মাধ্যমে ভগবৎ প্রাপ্তি প্রভৃতি মূলনীতির উপর ভক্তিবাদ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এই আন্দোলনকে কতিপয় সাধক সামনে এগিয়ে নিয়ে যান। কবির তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।
→ ভক্তিবাদ সাধক হিসেবে কবিরের ভূমিকা : উত্তর ভারতে যে সকল ভক্তিবাদীদের উদ্যোগে হিন্দু-মুসলিম সমন্বয় সাধিত হয়েছিল কবির তাদের মধ্যে অন্যতম। কবির ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের মধ্যে কোনো প্রকার ভেদাভেদ করেননি। ঈশ্বরকে তিনি আল্লাহ, রাম, সাঁই ও হরি প্রভৃতি নামে অভিহিত করতেন, মূর্তি পূজা বা নামাজ উভয়েই তার সমান আপত্তি ছিল। নাভাজী
বিরচিত ‘ভক্তমালা’ থেকে তার উপদেশসমূহ জানা যায়। হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কে কবিরের অতি স্পষ্ট ধারণা ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি হিন্দু সমাজের জাতিভেদ প্রথার সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। তিনি হিন্দু সমাজের জাতিভেদ প্রথার সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ভক্তি ব্যতীত ধর্ম অর্থহীন। সংসার ধর্ম পরিত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণেরও
কোনো উপদেশ তিনি দেননি। বহু মানুষ কবিরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেও তিনি একজন সাধারণ মানুষের ন্যায় স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে ঘর সংসার করতেন। এমনকি বাড়িতে বাস তিনি বস্ত্র বয়ন করতেন এবং বাজারে তা বিক্রি করে দিন অতিবাহিত করতেন। হিন্দু-মুসলিম সকলেই তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল। কবিরের শিষ্যগণ ‘কবির পন্থি’ নামে পরিচিত। তার উপদেশসমূহ তারই শিষ্য ভগবান দাস ‘বীজক’ গ্রন্থে সংকলিত করেছিলেন। এভাবে হরি ও আল্লাহর মিলনের যে বাণী কবির শুনিয়েছিলেন সেটা তার
শিষ্যদের মাঝে কতখানি কার্যকরী হয়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তা সত্ত্বেও কবিরের আদর্শ ও শিক্ষা একেবারে ব্যর্থ হয় নাই একথা বলা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একজন ভক্তিবাদী সাধক হিসেবে তৎকালীন মুসলিম ও হিন্দু সমাজে কবিরের খ্যাতি ছিল প্রচুর। মূর্তি পূজা বা নামাজ উভয়েই তার সমান
আপত্তি ছিল। হিন্দু সমাজের জাতিভেদ প্রথারও তিনি ছিলেন ঘোর বিরোধী। এতদসত্ত্বেও উভয় সম্প্রদায়ের লোকের নিকটই তিনি সমাদৃত ছিলেন।