উত্তর : ভূমিকা : ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে উত্তর ভারত নেতৃত্ব দান করলেও অষ্টম শতকের দিকে দক্ষিণ |
ভারত হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মাঝে সংঘর্ষ রাজনৈতিক। অস্থিরতা ও দেউলিয়াত্বের সৃষ্টি হয়েছিল। এ সময় মালাবারে। ইসলামের আবির্ভাব ঘটলে এর সাম্যনীতির কারণে বহু বর্ণে | বিভক্ত প্রথা সর্বস্ব হিন্দু ধর্মানুসারীরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ | করতে থাকে। এমতাবস্থায় হিন্দু সাধু ও দার্শনিকগণ হিন্দু ধর্মকে সংস্কার সাধনের মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে একে রক্ষার জন্য শিব ও বিষ্ণুর আরাধনার নামে যে আন্দোলনের সূচনা। করেন তাই ভক্তিবাদ আন্দোলন নামে পরিচিত।
→ ভক্তিবাদ আন্দোলনের প্রেক্ষাপট : তৎকালীন সময়ে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলকে মনে করা হতো রাক্ষসপুরী। কারণ। ভারতের দক্ষিণাঞ্চল সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় প্রভৃতি বিষয়ে ছিল মারাত্মক সংঘর্ষ মুখর। তাই বহুকাল ধরে এ দক্ষিণাঞ্চল উত্তর ভারতের চেয়ে রাজনৈতিকসহ অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। দক্ষিণ ভারতে কেন্দ্রীয় শক্তি না থাকায় পান্তর, চঁচাল প্রভৃতি রাজ্য ভাগ হয়ে সর্বদা সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতো।
রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশৃঙ্খলায় মানুষের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছিল। ঠিক এসময় দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলে
ইসলামের আবির্ভাব হয়। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যদিকে হিন্দু ধর্মের
নিষ্পেষণ, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সাথে সংঘর্ষে অপরদিকে ইসলামের সাম্যবাদী বাণী প্রচারিত হলে লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। আবার, শংকরাচার্যের গোঁড়া
হিন্দুবাদ ও দুর্বোধ্য দর্শনের লোক গোষ্ঠী অনেকটা হতাশ হয়েছিল। সে জন্য বিভিন্ন মতে বিশ্বাসী না হয়ে Intense devotion to God অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রতি একক আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে মুক্তিলাভের কথা বলা মূলত হিন্দু ধর্মকে রক্ষার জন্য এটি একটি সামাজিক ধর্মীয় আন্দোলন। এছাড়া মুসলিম শাসকগণ কর্তৃক অনেক মন্দির ধ্বংস হলে হিন্দুরা প্রতিমা পূজা বাদ দিয়ে ভক্তিকেই ধর্ম-কর্মের অবলম্বন হিসেবে নেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভক্তিবাদ আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে বিশেষভাবে হিন্দু সমাজের জন্য একটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংস্কারমূলক আন্দোলন। ভক্তিবাদে বর্ণবাদ বা বিশেষ ধর্মের প্রতি চরম পন্থার বিরোধিতা করা হয়। হিন্দু ধর্ম যখন বিভিন্ন সমস্যার আবর্তে পড়ে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, ঠিক তখন কবির, নানক, চৈতন্যদের প্রমুখ ভক্তিবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মকে রক্ষার প্রচেষ্টা চালান ও অনেকটা সফল হন।