উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপত্যের মধ্যে গৌড়ের আদিনা মসজিদ অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। সুলতানি আমলে বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য বহনকারী এ মসজিদটি মুসলিম ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। চৌদ্দ শতকের বাংলার মুসলমানেরা যে শিল্পানুরাগী ও সূক্ষ স্থাপত্য কারুকার্যের অধিকারী ছিল আদিনা মসজিদ। সুলতানি আমলে বাংলায় স্থাপত্য শিল্প চর্চা করা হতো ও তার পৃষ্ঠপোষকতা দান করা.হতো আদিনা মসজিদ তার নিদর্শন। এ মসজিদটি সুলতানি আমলের শাসকদের পরিচয় বহন করে।
→ আদিনা মসজিদ : সূক্ষ্ম স্থাপত্য ও কারুকার্য খচিত এক ঐতিহ্যবাহী আদিনা মসজিদ সম্পর্কে নিচে আলোকপাত করা হলোঃ
১. অবস্থান : আদিনা মসজিদটি পাণ্ডুয়ায় অবস্থিত। এ মসজিদটির নিদর্শন আজো বিদ্যমান।
২. নির্মাণকাল : প্রাচীন মুসলিম বাংলার এ বিখ্যাত মসজিদ কবে, কখন, কোনো সালে নির্মাণ করা হয়েছে তার কোনো সটিক সময়কাল স্থির করা সম্ভব হয়নি। ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন যে, এটি ইলিয়াস শাহী বংশের সুলতান সিকান্দার শাহের
সময়ে নির্মিত। তবে ‘রিয়াজ-উস সালাতীন’ গ্রন্থে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যে, আদিনা মসজিদটি ১৩৬০-১৩৬৮ সালে এই চার
বছর সময়কালব্যাপী নির্মিত। সুলতান সিকান্দার শাহ এর শাসনামলের গৌরবজনক একটি অধ্যায় আদিনা মসজিদ ।
৩. নির্মাণ কৌশল : আদিনা মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৫০৭ফুট, প্রস্থ ২৮৫ ফুট এবং উচ্চতা ৬০ ফুট। এর স্তম্ভগুলো ছিল সূক্ষ্ম কারুকার্য খচিত। এর অঙ্গ সজ্জায় বাংলাদেশের সনাতন পোড়ামাটি শিল্পের ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে মসজিদটির মত এত বিশাল মসজিদ আর কোথাও নাই । ঐতিহাসিক ফারগুনসের মতে, আদিনা মসজিদ দামেস্কের
সুবিখ্যাত জুমা মসজিদের অনুকরণে নির্মিত।
কতিপয় ঐতিহাসিক মনে করেন যে, এ মসজিদ নির্মাণে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ব্যবহার করা হয়েছিল ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পাণ্ডুয়ার আদিনা মসজিদ.প্রাচীন বাংলার মুসলমানদের অন্যতম গৌরবময় কীর্তি। তৎকালীন. মুসলমান কারিগরদের অদূরদর্শিতার কারণে মসজিদটি বেশিদিন.স্থায়ী হয়নি। এ মসজিদ সুলতানি শাসনামলের মূল্যবান ঐতিহ্য
রহন করে। বর্তমান সময়েও এ মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ সুলতানি আমলের গৌরবজনক ঐতিহ্য হিসেবে নিদর্শন বহন করে চলেছে।