উত্তর : ভূমিকা : সুলতানি আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়। হিন্দু শাসনামলের অবসানের সাথে সাথে সংস্কৃত ভাষা চর্চার অবলুপ্তির পথ উন্মুক্ত হয় এবং বাংলা ভাষা চর্চার সূত্রপাত হয়। হিন্দু শাসকগণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পথকে রুদ্ধ করে রেখেছিল। মুসলিম শাসকবর্গ ঐ রুদ্ধ দ্বার উন্মোচন করেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে বাংলা ভাষার সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। ফলে সুলতানি আমলে শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ঘটে।
→ সুলতানি আমলে বাংলা সাহিত্যের উন্নতির কারণসমূহ : সুলতানি আমলে বাংলায় বাংলা সাহিত্যের উন্নতির কারণ সমূহ হলো :
১. বাংলা ভাষার উপর গুরুত্ব প্রদান : হিন্দু শাসনের অবসান ঘটিয়ে সুলতানি আমলের মুসলিম শাসকবর্গ সংস্কৃতির পরিবর্তে বাংলা ভাষা ও বাংল ভাষায় সাহিত্য রচনার উপর জোর দেন। এসময় বাংলা ভাষার রাজদরবারে সাহিত্য রচনা ও চর্চার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার কদর বেড়ে যায়।
২. সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতা : এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ছিল মুসলমান বাঙালি ও হিন্দু বাঙালি। বিদেশ থেকে আসা শাসক, সুফি সাধক, পীর দরবেশরাও এদেশের জনগণের মনের ভাব বোঝার জন্য বাংলা ভাষা আয়ত্ত করেন, এর ফলে বাংলা ভাষায় নানা রচনা প্রকাশ পেতে থাকে। সুলতানি যুগের শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান শাসকবর্গের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা বাংলা সাহিত্যের বিকাশে বিশেষভাবে স্মরণীয়।
৩. গণতান্ত্রিক শিক্ষানীতি গ্রহণ : হিন্দু শাসনামলে শিক্ষা ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক নীতির অনুপস্থিতি ছিল। ব্রাহ্মণরা একচেটিয়া
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্কৃত চর্চা করণে। রাজদরবারেও সংস্কৃত চর্চা হতো। কিন্তু মুসলিম শাসকেরা এসে সকলের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মোচন করে দেন। ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতির ক্ষেত্রে বন্ধাত্বের অবসান ঘটে এবং বাঙালিরা সমবেতভাবে নিজেদের কৃষ্টি ও সভ্যতায় বিকাশে আত্মনিয়োগ করতে অনুপ্রেরণা দেয়।
৪. মুসলিম কবিদের উদ্যোক্তা : কিছু সংখ্যাক মুসলিম কবি বাংলা ভাষায় গ্রন্থ রচনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন এবং তারা
বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন।
৫. ধর্মান্তরিত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে রচিত সাহিত্য :
বাংলায় ধর্মান্তরিত মুসলমানগণ আরবি ও ফার্সি ভাষার সাথে পরিচিত ছিল না। তথা যাতে ইসলাম ধর্মের সাথে পরিচিত হতে পারে কিছু মুসলিম কবি এগিয়ে আসেন ও বাংলা ভাষায় গ্রন্থ রচনা করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলায় স্বাধীন সুলতান আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অগ্রগতিতে সুলতানদের পাশাপাশি, কবি, সাহিত্যিক, পণ্ডিত ও সাধারণ জনগণের অবদান ও অনস্বীকার্য। সুলতানি আমলের শাসকগণ বাংলা ভাষাভাষী বিভিন্ন অঞ্চল ও অধিবাসীদের একত্রিত করে একটি রাজনৈতিক ভাষাভিত্তিক ঐক্য গড়ে তোলেন। তারা বাঙালির রাজনৈতিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে বাংলা ভাষাভিত্তিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর তাই বলা যায় যে, বাংলা সাহিত্যের বিকাশে সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতা, মুসলমান কবি সাহিত্যেকদের অবদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।