উত্তর : ভূমিকা : সুলতানি আমলে বাংলায় স্থাপত্যের প্রধান উপাদান ছিল খিলান (আর্চ), গম্বুজ (ডোম), মিনার ও মিহরাব প্রভৃতি। সংজ্ঞাজক পদার্থ ছিল চুন, বালি ও পানির মিশ্রণ এবং সাজসজ্জার জন্য উজ্জ্বল ও রঙিন টালির ব্যবহার মুসলিম স্থাপত্য রীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। মুসলমান শাসকেরা দালান-কোঠা, মসজিদ, সমাধি সৌধ প্রভৃতি নির্মাণ উক্ত পদ্ধতি ও উপাদান ব্যবহার করা হতো। মুসলিম শাসকগণ ও নির্মাতারা স্থানীয়
সহজলভ্য জিনিস এবং রাজমিস্ত্রি ও তার পরিবেশের উপর নজর রেখে মিশ্র স্থাপত্য শিল্প গড়ে তোলেন। এজন্য স্থাপত্য শিল্পে স্থানীয় চিন্তাধারা ও রীতিনীতির প্রভাব পড়ে মুসলিম স্থাপত্যের উপর। এ স্থাপত্যশিল্পগুলোতে স্থানীয় প্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিকতার ছাপ বিদ্যমান। নিম্নে সুলতানি আমলে বাংলায় মিশ স্থাপত্য শিল্প সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো-
→ সুলতানি আমলে বাংলায় মিশ্র স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠার কারণ
উপাদান : সুলতানি আমলে বাংলায় মিশ্র স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠার কারণ বা উপাদান সমূহকে প্রধানত চার ভাগ করা যায়। যথা-
১. জলবায়ু : ভৌগোলিক অবস্থান ও আবহাওয়া মুসলিম স্থাপত্যের উপর প্রভাব ফেলে। এই স্থানীয় প্রভাবের জন্য স্থাপত্য
শিল্পে স্থানীয় কিছু রীতি-নীতি যোগ করতে হয়। বাংলার প্রচুর বৃষ্টিপাত দালান-কোঠার ছাদ নির্মাণ রীতিতে প্রভাব ফেলে । যার
জন্য বক্রাকৃতির ছাদ নির্মাণ করা হয় যাতে প্রবল বৃষ্টিতেও ছাদ ও দালানের কোনো ক্ষতি না হয়। এই বৃষ্টিপাত মসজিদ নির্মাণেও কিছু রীতি বাধ্যতামূলক নিয়ন্ত্রণ করে দেয়।
২. ঐতিহ্য : প্রাক-মুসলিম স্থাপত্যের সাথে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের অনেক মিল আছে। প্রাক্-মুসলিম স্থাপত্যের কাছে মুসলিম স্থাপত্য অনেকাংশে ঋণী। এটি ঐতিহ্যগতভাবে
উত্তরাধিকার সূত্রে চলে এসেছে। মনোলিথিক পিলার মুসলিম স্থাপত্যের বিশেষ ঐতিহ্য। আর্চ, মিনার ও টাওয়ার এদেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের পরিচিত স্থাপত্য রীতি। কেবল মিহরাব
বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের মাঝে সংযোজিত হয়। মুসলিম স্থাপত্য ইট-পাথর দিয়ে তৈরি হতো।
৩. উপকরণ বা উপাদান : নির্মাণ কার্যের নিমিত্তে সুলভে পাওয়া উপাদানগুলোর খুব প্রভাব ছিল বাংলার গৃহাদির আতি ও
নির্মাণ কৌশলের উপর। দৃষ্টান্ত: এ প্রদেশে প্রচুর বাঁশ পাওয়া যেত। কুঁড়ে নির্মাণে বাঁশ ব্যবহার হতো। পাথরের ব্যবহার কম
হতো। পাথর সুলভ মূল্যে ছিলনা। তাছাড়া পাথর পাওয়া যেতনা। পর্যাপ্ত পলি-কাদামাটি থাকায় ইটের ব্যবহার হতো বেশি।
৪. ঐতিহাসিক পরম্পরা : ঐতিহাসিক পরম্পরায় টেরাকোটা বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আদিনা মসজিদে পাথরের টেরাকোটা
সাজসজ্জা লক্ষ করা যায়। মিলান ছিল দ্বিকেন্দ্রিক ও তীক্ষ্ণ ধারবিশিষ্ট ভারি স্তম্ভ ছিল । কতিপয় মসজিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলোঃ
১. এক গম্বুজ বিশিষ্ট; ২. সম্মুখে বারান্দাসহ এক গম্বুজ; ৩. বহু গম্বুজ ও ৪. বহু গম্বুজ বিশিষ্ট খিলান করা ধনুকের মত ছাদ বিশিষ্ট মসজিদ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতানি আমলে বাংলায় ভৌগোলিক, জলবায়ুগত কারণ, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক পরম্পরা প্রভৃতি কারণে মিশ্র স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠেছিল। সুলতানি আমলের স্থাপত্য শিল্প বর্তমান কালের ইতিহাস হয়ে বিভিন্ন স্থানে দাড়িয়ে আছে।