উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের অন্যতম একটি সময় হলো সুলতানি আমল। এ আমলে বাংলার শাসনব্যবস্থা, দিল্লির অনুকরণেই গড়ে উঠেছিল। বাংলায় সুলতানি শাসনের মূল ভিত্তি ছিল সামরিক শক্তি। বাংলার প্রায় সবকিছুতে দিল্লি দরবারের ছোঁয়া ছিল। বাংলায় মুসলিম শাসনের বিস্তৃতির সাথে সাথে
সামরিক বিভাগ ও নির্দিষ্ট রূপে পরিগ্রহ করেছিল।
সুলতানি আমলে বাংলায় সামরিক বিভাগ : নিম্নে মধ্যযুগের বাংলায় সামরিক বাহিনী সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
সুলতানি শাসন ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান শক্তির উৎস হলো সামরিক বিভাগ। এ সামরিক বিভাগের সর্বাধিনায়ক হিসেবে বাংলার মুসলমান সুলতানগণ সামরিক শক্তির উপর অধিক গুরুত্বারোপ করতেন। মূলত দিল্লির সুলতানদের সম্প্রসারণনীতি থেকে বাংলার সুলতানদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করতে এবং অমুসলমানদের উপর শাসন করতে তারা এ ব্যবস্থার উপর অধিক নির্ভরশীল ছিলেন।
বাংলার শাসনব্যবস্থায় সামরিক ও বেসামরিক উভয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের সামরিক বাহিনীর উচ্চপদে নিযুক্ত করতে দেখা যায় ।
১. গ্রামের শাসন কর্মচারীদেরকে ‘ইকলাম আরছা’;
২. শহরের শাসন কর্মচারীদেরকে ‘সরা-ই-লশকর’ বলা হত।
সেনাবাহিনীর প্রকারভেদ বা স্তর : সুলতান যুদ্ধে কখনো কখনো ভিন্ন সেনাপতি নিয়োগ করতেন। আবার কখনো নিজেই যুদ্ধ পরিচালনা করতেন । সৈন্যবাহিনীকে পাঁচ ভাগ করা হতো। যথা-
১. পদাতিক বাহিনী; ২. অশ্বারোহী বাহিনী; ৩. হস্তী বাহিনী; ৪. নৌ-বাহিনী ও ৫. পাইক বাহিনী। প্রথম দিকে অশ্বারোহী বাহিনীর গুরুত্ব বেশি থাকলেও পরবর্তীতে নৌ-
বাহিনীর প্রভাব বৃদ্ধি পায় ।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতানি আমলে বাংলা সম্পর্কে আমরা যতটুকু জানতে পারি তা থেকে বুঝা যায় যে, এ আমলের শাসনব্যবস্থা বেশ শক্ত ও মজবুত ছিল। প্রজাসাধারণের কল্যাণার্থেও এ ব্যবস্থা যথেষ্ট সহায়ক ছিল। একটি দেশের সামরিক বাহিনীর উপর নির্ভর করে সেদেশের স্থায়ীত্ব, শান্তি-শৃঙ্খলা।