উত্তর : ভূমিকা : বাংলা সুলতানি শাসনামলে অন্যান্য বিভাগ বা ক্ষেত্রের মত রাজস্ব বিভাগও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এসময় রাজস্ব বিভাগ যথেষ্ট উন্নত ছিল। অর্থ সংগ্রহ, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিয়ন্ত্রন, সরকারি দপ্তর, পরিচালনা প্রভৃতি বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর আদান-প্রদান, আয়-ব্যয় প্রভৃতি বিষয়গুলো সুনিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করা হত। এসময় বাংলার রাজস্ব বিভাগ দিল্লির দরবারকে অনুসরণ করতো। এজন্য রাজস্ব বিভাগেও অন্যান্য শাসনব্যবস্থার মত প্রতিটা ক্ষেত্রে আধুনিকতার
ছোঁয়া লাগে। নিম্নে সুলতারি আমলে বাংলার রাজস্ব বিভাগ বা রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো :
সুলতানি আমলে বাংলার রাজস্ব বিভাগ বা রাজস্ব ব্যবস্থা সুলতানি শাসনামলে বাংলায় চার ধরনের রাজস্ব আদায় করা
হত। উজির এ সকল রাজস্ব বিভাগ পরিচালনা করতেন। রাজস্বসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো। যথা-
১. ভূমি রাজস্ব : তৎকালীন শাসনামলে ভূমি রাজস্ব বিভাগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ছিল। অর্থ না থাকলে রাষ্ট্র চলতে পারে না একথা সকলেই জানে। ভূমি রাজস্ব কোষাগার পরিপূর্ণ করার অন্যতম মাধ্যম। উৎপন্ন ফসলের উপর ভূমি কর আরোপ করা হত। ‘সর-ই-গোমস্তা’ রাজস্ব আদায় করতেন।
২. বাণিজ্য শুল্ক : ভূমি রাজস্বের পর রাষ্ট্রীয় আয়ের দ্বিতীয় উৎস ছিল বাণিজ্য শুল্ক। আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের উপর নির্দিষ্ট
হারে শুল্ক ধরা হত। তৎকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর হতে শুল্ক আদায় করা হত।
৩. গনিমত : ইসলামি আইনানুসারে গনিমত হচ্ছে যুদ্ধলব্ধ ধন যার এক পঞ্চমাংশ সরকারি রাজকোষে জমা দেওয়া হত। অপর চার পঞ্চমাংশ সৈন্যদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হত। এই গনিমতের প্রাপ্ত সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে একটা বড় অংশ ছিল যা, জনকল্যাণ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় কাজে লাগতো ।
৪. আবগারি শুল্ক : আবগারি শুল্ক রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থের গুরুত্বপূর্ণ আর একটা উৎস ছিল। হাটকর, পথ কর, ঘাট কর
প্রভৃতি ছিল আবগারি শুল্কের উপাদান। এ সকল বিষয়ের উপর কর আরোপ করা হতো। আর এ করকে আবগারি শুল্ক বলা হত।
উপসংহার : উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, সুলতানি আমলে বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ ছিল। উক্ত অর্থ রাষ্ট্রীয়
কল্যাণকর কাজ, রাষ্ট্রপরিচালনার যাবতীয় ক্ষেত্রে ব্যয় করা হত। সুতরাং রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অর্থের প্রয়োজন এবং
সেই অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয় যা সুলতানি আমলে করা হয়েছিল।