উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাসনকাল সুলতানি শাসন কাল। সুলতানি আমলে ভারতবর্ষের সকল স্থানের মত বাংলা আর্থ-সামাজিক অবস্থাও ছিল চমকপত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। তখনকার সময় ছিল সামন্ততান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ইসলামের সাম্য ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের বদৌলতে নিজস্ব মেধার গুণে নিম্ন পর্যায়ের ব্যক্তি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ লাভ করেছেন। এ যুগের অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তি ছিল কৃষি। কৃষিনির্ভর প্রধান জীবনব্যবস্থা ছিল। সাধারণ জনতা কৃষি কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। অতিরিক্ত উৎপন্ন কৃষিপণ্য দেশের
চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এভাবে কৃষিপণ্য ও কৃষক রাষ্ট্রের গুরুত্বপুর্ণ ভিত্তিতে পরিণত হয়।
সুলতানি আমলে বাংলার কৃষির অবস্থা : সুলতানি আমলে বাংলায় কৃষির অবস্থা সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো :
সুলতানি আমলে বাংলার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিল কৃষিজ পণ্য ও কৃষি । সুলতান ও শাসক অভিজাতদের সচ্ছলতার মূলে ছিল কৃষি জমির আয় থেকে পাওয়া কর। এ সময় পর্যাপ্ত ভূমি ছিল। গাঙ্গেয় উপত্যকার বহু অংশ তখনো অকর্ষিত ও জঙ্গলময় ছিল। এ পতিত জমিগুলোকে কৃষিযোগ্য ও ফলনশীল করার জন্য মুহাম্মদ বিন তুঘলক সেচ ব্যবস্থা চালু করে অনাবাদী জমিকে আবাদি জমিতে পরিণত করার নীতি গ্রহণ করেন। সুলতানি আমলে জমিতে নানারকম ফসল ফলতো। প্রধান কৃষিজাত পণ্য ছিল ধান, গম, কলাই, ভুট্টা, আলু, আখ, তামাক, বাদাম, যব, মসলা, তেলবীজ, পান, সুপারি, আদা, বিভিন্ন প্রকার
ফল প্রভৃতি। এছাড়ার বিক্রির জন্য নীল, আফিম প্রভৃতির চাষ হতো। বাংলায় প্রচুর আখ উৎপন্ন হত। ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ
বৃত্তান্তে বাংলার কৃষি পণ্য সম্পর্কে সুখ্যাতি করেন। বাংলার ধানের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া বাংলায় উৎপন্ন দ্রব্যের সাহায্যে কারিগর শ্রেণি নানা ধরনের শিল্পদ্রব্য তৈরি করতেন।
উপসংহার: পরিশেষে একথা বলা যায় যে, সুলতানি যুগের শাসকগণের সুদৃষ্টির কারণে কৃষির অবস্থা বেশ ভালো ছিল। পাশাপাশি, কৃষকদের নিষ্ঠা ও প্রেম একত্রিত হয়ে তৎকালীন বাংলার কৃষির অবস্থা সন্তোষজনক ছিল। কৃষিকে কেন্দ্র করে জীবিকা অর্জনকারী মানুষের অবস্থাও তাই ভালো ছিল। উৎপাদিত কৃষি পণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। এভাবে সুলতান, কৃষক, কৃষিপণ্য ও বাংলার সুনাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।