উত্তর : ভূমিকা : সুলতানি আমলে বাংলা ও বাংলার জনগণ খুব ভালো অবস্থানে ছিলেন। সার্বিক দিক দিয়ে বাংলা নবজাগরণের পথে প্রবাহমান ছিল। বাংলার মানুষ শাসকদের
কল্যাণকর শাসনে খুব সুখী-সমৃদ্ধ জীবন-যাপন করছিল। একারণে অন্যান্য নিয়ামকের পাশাপাশি স্থাপত্য কলায়ও বেশ
উন্নতি লাভ করে তৎকালীন সুলতানি শাসনামলে বাংলা, ভূ-প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। নিম্নে বাংলার স্থাপত্যকলার গঠনশৈলী বা রীতিসমূহ উল্লেখ করা হলো- সুলতানি আমলে বাংলার স্থাপত্যকলার রীতি বা গঠন
মৌল : সুলতানি শাসনামলে বাংলার স্থাপত্য শিল্প ঐ এলাকার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ধারার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এর
ফলে বাংলার স্থাপত্য শিল্পে একটি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। এই প্রদেশের (বাংলার) স্থাপত্য শিল্প এর প্রকৃতি অর্থাৎ মাটির
সাথে সম্পর্কযুক্ত ও স্থানীয় রীতিনীতির সাথে মুসলিম চিন্তাধারার সমঝোতারই ফল। ভারতীয় উপমহাদেশে জয় করার পূর্ব থেকেই
মুসলমানদের নিজস্ব উন্নত স্থাপত্য শিল্প ছিল। বাংলার স্থাপত্য শিল্প ভূমির প্রকৃতি, আবহাওয়া ও সহজলভ্য উপাদানের দ্বারা
নির্মিত হত। কাদামাটির সহজ লভ্যতার জন্য এখানকার স্থাপত্য নির্মিত হতো ইট দিয়ে। ইটের সাথে অলংকারণের জন্য ব্যবহার হতো টেরাকাটা। বাংলার বাড়ি-ঘরগুলো দুই ধরনের উপাদান দ্বারা নির্মিত হতো। যথা- ১. বাঁশ ও ছন দ্বারা ও ২. ইট দ্বারা। সুলতানি আমলে নির্মিত স্থাপত্যগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের
ষাট গম্বুজ মসজিদ, মালদহের গুলমন্দ মসজিদ, পাণ্ডুয়ার জামে মসজিদ ও জামে-ই-মসজিদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ত্রিবেণী, সাতগাঁও, হুগলী জেলার ছোট পাণ্ডুয়ায় নির্মিত অট্টালিকাগুলো ছিল
সুলতানি স্থাপত্যের গঠন পর্ব। একলাখী সমাধি দাখিল দরওয়াজা, তাঁতিপাড়া মসজিদ ইত্যাদি সুলতানি আমলের অন্যতম নিদর্শন।
উপসংহার: পরিশেষে একথা বলা যায় যে, সুলতানি আমলে যে স্থাপত্য রীতির সূচনা হয়েছিল। তা ছিল অসাধারণ স্থাপত্যকীর্তি। পরবর্তী যুগে এধারা অনুসৃত হয়েছিল। সুলতানি আমলে বাংলায় প্রকৃতি, ভৌগোলিক পরিবেশ, উপাদানের প্রাপ্তিতা প্রভৃতির উপর নির্ভর স্থাপত্য শিল্প স্বতন্ত্রভাবে গড়ে
উঠে। এখানে ধামা, ছন, ইট প্রভৃতি দ্বারা স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠে। স্থাপত্য শিল্প সুলতানদের রুচি, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। পরবর্তী সময়ে এ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আরও উন্নত স্থাপত্য শিল্প গড়ে উঠে