সুলতানি শাসনামলে স্থাপত্যের বিকাশ ধারা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর : ভূমিকা : মুসলমানদের কর্তৃক বাংলা বিজয়ের সাথে সাথে বাংলায় মুসলিম স্থাপত্য বিকাশের পথ সুগম হয়। প্রায় দুই শত বছর বাংলায় সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ সুদীর্ঘ | সময়ে সুলতানগণ স্থাপত্য শিল্পকে তাদের মেধা ও প্রজ্ঞা দ্বারা | উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। তৎকালিন স্থাপত্য শিল্প ছিল মুসলিম স্থাপত্য রীতি-কৌশল ও স্থানীয়-স্থাপত্য রীতি-কৌশলের সমন্বিত রূপ। নিম্নে সুলতানি আমলে স্থাপত্যের বিকাশ ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো- সুলতানি শাসনামলে বাংলায় স্থাপত্যের বিকাশ ধারা :
ভারতীয় উপমহাদেশ জয় করার আগেই মুসলমানদের নিজস্ব উন্নত স্থাপত্য শিল্প ছিল। এটা ছিল পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার স্থাপত্য শিল্পের ঐতিহ্য। বাংলায় সুলতানি আমলে যে স্থাপত্য শিল্প বা নিদর্শন গড়ে উঠেছিল তাতে মুসলিম শিল্পরীতির উজ্জ্বল নিদর্শন আজো বিদ্যমান। এই স্থাপত্যের প্রধান উপাদানগুলো
ছিল খিলান, গম্বুজ, মিনার ও মিহরাব। সংযোজক পদার্থ হিসেবে চুন, বালি ও পানি মিশ্রিত দ্রব্য এবং সাজসজ্জার নিমিত্তে, উজ্জ্বল৷ ও রঙিন টালির ব্যবহারও মুসলিম স্থাপত্য রীতির একটি বৈশিষ্ট্য ছিল। বস্তুত মুসলিম স্থাপত্য রীতি বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে সিরিয়া, , মিশর এবং ইরানের রীতির সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছিল এবং তাতে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনদের প্রভাবও পরিলক্ষিত
হয়। এ সম্পর্কে স্যার জন মার্শাল বলেন, “ইন্দো-ইসলামি শিল্প কেবল ইসলামি নয়, কেবল হিন্দুয়ানী রীতিও নয়, বিস্তৃতভাবে
বলতে গেলে ইন্দো-ইসলামি স্থাপত্যে অল্প-বিস্তর উভয় জাতির প্রভাব ও অবদান রয়েছে।” অন্যদিকে, বাংলার স্থাপত্য ভূমির প্রকৃতি, আবহাওয়া ও সহজলভ্য উপাদানের দ্বারা নিরুপিত হয়। বাংলা নদ-নদী ও ঝড়বৃষ্টির দেশ। নদনদী সমূহের ভাঙাগড়া এবং তাদের গতিপথের পরিবর্তন আবহমানকাল থেকে বাংলার জীবনধারার
একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ফলে বিশাল স্থাপত্য বা প্রাসাদ নির্মাণের পথে এটাই ছিল একটি বিরাট অন্তরায়। কিন্তু স্থাপত্য নির্মাণের
|| প্রয়াস তাই বলে থেমে থাকে নি। স্থাপত্য শিল্পের ক্ষেত্রে মুসলমানরা বাংলায় তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য আনয়ন করে, কালক্রমে তাদের স্থাপত্য শিল্পে স্থানীয় প্রভাব দেখা যায়,
জলবায়ু-পরিবেশ বিবেচনা করে নির্মাণকার্যে তাদেরকে সহজলভ্য উপাদানগুলো ব্যবহার করতে হয়। ফলে মুসলিম ঐতিহ্যেরসাথে স্থানীয় রীতি ও উপাদানের সামঞ্জস্য ও সংমিশ্রণে সুলতানি আমলের স্থাপত্য শিল্প একটি বিশিষ্ট রূপ বা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
উপসংহার : উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে একথা বলা যায় যে, মূলতানি আমলের বাংলায় স্থাপত্যের বিকাশ ছিল বাংলার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম ঐতিহ্য ও দেশীয়ঐতিহ্যের সমন্বয় ও সংমিশ্রণেরই ফলশ্রুতি। সুলতানি আমলে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠা বিভিন্ন মসজিদ, মাজার, সৌধ, কেল্লা বা দুর্গ ও মিনার ইত্যাদি বাংলার স্থানীয় ও মুসলিম ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে সুলতানি আমলের
স্থপত্যসমূহ অপূর্ব নিদর্শন বহন করে চলেছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/